উত্তর আমেরিকাজুড়ে চলছে ভয়ংকর তুষার ঝড়। এতে এখন পর্যন্ত ৬২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যেই মারা গেছে ২৮ জন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ মৃত্যু ঘটেছে বাফেলোতে।
আজ বুধবার বিবিসি বলছে, উত্তর আমেরিকাজুড়ে এ তুষার ঝড় শুরুর পর থেকে কয়েক হাজার মানুষ এখনো বিদ্যুৎহীন। বাফেলো শহরের কর্মকর্তারা বলছেন, শহরটিতে গাড়ি চালনা বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মিলিটারি পুলিশ আনা হয়েছে। এরই মধ্যে তুষার ঝড়ের কারণে দেওয়া জরুরি অবস্থার মধ্যেই বেশ কিছু জায়গা থেকে লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। নিউইয়র্ক রাজ্যের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেক মানুষ দুইদিনের বেশি সময় ধরে তাদের গাড়িতেই আটকে পড়েছিলেন। দেশটির আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, নিউইয়র্কে আরও প্রায় নয় ইঞ্চি তুষারপাত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিউ ইয়র্ক রাজ্যকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সহায়তা দেওয়ার জন্য একটি জরুরি ঘোষণা অনুমোদন করেছেন। এই টুইট বার্তায় তিনি বলেন, যারা এই ছুটির মধ্যে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার সমবেদনা।
নিউ ইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হচুল এই ঝড়কে এই শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ংকর তুষার ঝড় বলে বর্ণনা করেছেন। বাফেলো হচ্ছে ক্যাথি হচুলের নিজের শহর। ক্যাথি হচুল বলেছেন, এখানকার অবস্থা এখন যুদ্ধক্ষেত্রের মতো, রাস্তার ধারে যত গাড়ি আটকে পড়েছে, তা দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। তিনি বলেন, অনেক জরুরি সেবা সংস্থার গাড়ি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে পৌঁছাতে পারেনি, অথবা নিজেরাই তুষারের মধ্যে আটকে পড়েছে।
একটি স্থানীয় পরিবার, যাদের দুই হতে ছয় বছর বয়সী শিশু সন্তান আছে, তারা তুষারের মধ্যে আটকে পড়ার ১১ ঘণ্টা পর ক্রিসমাসের দিন গভীর রাতে তাদের উদ্ধার করা হয়। জিলা সানটিয়াগো পরে সিবিএস নিউজকে বলেন, আমি আশা একদম ছেড়ে দিয়েছিলাম। তিনি গাড়ির ইঞ্জিন চালু রেখে নিজেকে উষ্ণ রেখেছিলেন। যে ভয়ংকর দুর্যোগের মধ্যে তারা ছিলেন, সেটি থেকে বাচ্চাদের মন অন্যদিকে সরাতে তিনি গাড়িতে তাদের সঙ্গে গেম খেলে সময় কাটান। মেরিল্যান্ডের গেইথার্সবার্গের বাসিন্দা ডিটজাক ইলুঙ্গা সিবিএস নিউজকে জানান, তিনি মেয়েদের নিয়ে অনটারিওর হ্যামিলটনে তার আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। পথে তার গাড়িটি বাফেলোর কাছে তুষারে আটকে পড়ে।
বাফেলো শহরটি যে এরি কাউন্টির মধ্যে পড়েছে, সেখানকার একজন কর্মকর্তা মার্ক পোলোনকার্জ বলেন, এই দুর্যোগ শেষ হতে যাচ্ছে এমন আশা তারা দেখছেন, তবে এখনো দুর্যোগ কাটেনি। এরকম ঝড় একটা প্রজন্ম একবারই দেখেছে। স্থানীয় মেডিকেল এক্সামিনার অফিসের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বেশিরভাগ মানুষ মারা গেছে তুষার সরাতে গিয়ে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে। অনেককে তাদের গাড়ির ভেতর মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। উত্তর আমেরিকার এবারের এই তুষার ঝড়কে ‘বম্ব সাইক্লোন’ বা সাইক্লোন বোমা বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। যখন বায়ুমণ্ডলের চাপ হঠাৎ কমে যায়, তখন ভারী তুষারপাতের সঙ্গে তীব্র ঝড়ো বাতাস শুরু হয়। এটিকেই সাইক্লোন বোমা বলে বর্ণনা করছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী কয়েকদিনে অবস্থা একটু ভালো হবে, তবে তারপরও লোকজনকে এই পরিস্থিতিতে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহান্তে প্রায় আড়াই লাখ বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। ঝড়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট, ওহাইও, মিসৌরি, উইসকনসিন, কানসাস এবং কলোরাডো থেকেও। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মন্টানায় সবচেয়ে তীব্র শীত পড়েছিল, সেখানে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল হিমাংকের ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে। কানাডার অনটারিও এবং কিবেক প্রদেশে সবচেয়ে ভয়ংকর তুষার ঝড় হয়েছে। অনটারিওর প্রিন্স এডওয়ার্ড কাউন্টিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।