সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসেরের সাথে চুক্তি হওয়ার পর বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার হয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তবু তিনি ধনীতম ফুটবলার হতে পারছেন না। পর্তুগালের তারকার ১৫ গুণ সম্পত্তির মালিক বিশ্বের ধনীতম ফুটবলার।
পেশাদার ফুটবলার হিসেবে ক্লাবের থেকে পাওয়া টাকার বাইরে বাণিজ্যিক চুক্তি থেকে বছরে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা আয় করেন তিনি। আল নাসেরের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর রোনালদো বছরে প্রায় ১৮১০ কোটি টাকা আয় করবেন। আর বিশ্বের ধনীতম ফুটবলারের ২০২২ সালের আয় ১৯,৯৬৫ কোটি টাকারও বেশি। শুধু রোনালদো নন বিশ্বের ধনীতম ফুটবলারের সঙ্গে আয়ের লড়াইয়ে এঁটে ওঠার ক্ষমতা নেই লিওনেল মেসি, নেইমার, কিলিয়ন এমবাপ্পেসহ বিশ্বের প্রথম সারির কোনো ফুটবলারেরই।
মজার তথ্য হলো, তিনি ফুটবলার তেমন পরিচিত নন। ব্রুনেইয়ের জাতীয় দলের সাবেক সদস্য ফাইক বলকিয়াহই এখন বিশ্বের ধনীতম ফুটবলার। দেশের হয়ে ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন ২৪ বছরের মিডফিল্ডার। গোল করেছেন একটি। ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব সাউদম্পটনের যুব দলের সদস্য। ২০১৪-১৫ চেলসি এবং ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত লেস্টার সিটির যুব দলে খেলেছেন ফাইক। চেলসিতে থাকার সময় এক বছর লোনে আর্সেনালের যুব দলের হয়েও খেলেছেন। এখন খেলেন থাইল্যান্ডের ক্লাব চোনবুড়ি এফসিতে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এই ক্লাবে যোগ দিয়েছেন ফাইক। ব্রুনেইয়ের ফুটবলার হলেও তার জন্ম লস অ্যাঞ্জেলসে। আমেরিকার নাগরিকত্বও রয়েছে তার।
পেশাদার ফুটবলার হিসেবে তেমন উল্লেখযোগ্য আয় নেই ফাইকের। তবু তার আকাশ ছোঁয়া আয় ফুটবল বিশ্বের বিস্ময়। ফুটবলার ছাড়া আরো একটি পরিচয় রয়েছে ফাইকের। তিনি ব্রুনেইয়ের রাজ পরিবারের সদস্য। ফাইক ব্রুনেইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহর ভাইপো। ফাইকের বাবা ব্রুনেইয়ের যুবরাজ জেফরি বলকিয়াহ। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত তিনি ছিলেন দেশের অর্থমন্ত্রী। এখন তিনি ব্রুনেইয়ের বিনিয়োগ সংস্থার চেয়ারম্যান।
ব্রুনেইয়ের আইন অনুযায়ী দেশের সব তেলের খনি এবং ভান্ডারের মালিক রাজ পরিবার। তেল রফতানি থেকে বিশাল আয়ের প্রায় সবটাই রাজকোষের পরিবর্তে ঢোকে রাজ পরিবারের কোষাগারে। রাজ পরিবারের প্রত্যেক পুরুষের কিছু না কিছু রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব রয়েছে। ফাইকের উপরও রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব। ফুটবলের জন্য বিদেশে থাকেন তিনি। তাই কর্মচারীদের মাধ্যমে নিজের দায়িত্ব পালন করেন। সে কারণে বিপুল বেতন পান ফাইক। পান তেল ব্যবসার লভ্যাংশও।
ফুটবলার হিসাবে কেমন তিনি? না মোটেও আহামরি কিছু নয়। ইংল্যান্ডের একাধিক ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে খেলা শিখলেও তেমন উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স নেই ফাইকের। নিন্দুকরা বলেন, ফুটবলার হিসেবে দক্ষতার থেকেও ফাইকের সাথে ক্লাবের চুক্তি অনেক বেশি প্রভাবিত হয় তার বংশ পরিচয়ের জন্য। ব্রুনেইয়ের রাজ পরিবারের সন্তান হওয়ায় ফাইকের জীবনযাপন বিলাস বহুল। তার জীবনযাত্রার মানের সাথে তাল মেলানো অসম্ভব সতীর্থদের পক্ষে। যদিও সতীর্থদের সঙ্গে সহজভাবেই মেলামেশা করেন তিনি। মেনে চলেন কোচকেও। জন্ম সূত্রে নাগরিক হওয়ায় যুব জাতীয় দলের হয়ে ফাইককে খেলার প্রস্তাব দিয়েছিল আমেরিকা। যদিও তিনি ব্রুনেইয়ের জার্সিকেই বেছে নিয়েছেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা