প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য চীনের উহান শহরে খুব দ্রুত একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। মাত্র ১০ দিনে তৈরি এই হাসপাতালটি আজ সোমবার চালু করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীনে দুটো হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো-হুশেনশান হাসপাতাল, যার আয়তন ২৫ হাজার বর্গমিটার। এই হাসপাতালে এক হাজার শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয় উহান শহরে। সেখানে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের বাস। চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল রোববার পর্যন্ত ৩৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২০৫ জনে।
উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর গত ২৪ জানুয়ারি এই হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দেশটিতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে হুশেনশান হাসপাতালটি কত দ্রুত তৈরি করা হচ্ছে সেটা যাতে লোকেরা দেখতে পায় – সেজন্য এর নির্মাণকাজ চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
টেলিভিশনে হাসপাতাল নির্মাণের এই দৃশ্য দেখছে বহু মানুষ। গ্লোবাল টাইমস নামের পত্রিকা বলছে, চীনে প্রায় চার কোটি মানুষ হাসপাতাল নির্মাণের লাইভ স্ট্রিমিং দেখছে।
এই সম্প্রচার এতই জনপ্রিয় হয়েছে যে সেখানে ক্রেইন, বুলডোজার ও ডিগারের মতো যেসব যন্ত্র দিয়ে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলোও মানুষের কাছে খ্যাতি পেয়ে গেছে।
চীনের লোকজন সিমেন্ট মেশানোর একেকটি মেশিনের নাম দিয়েছে – দ্য সিমেন্ট কিং, বিগ হোয়াইট র্যাবিট এবং দ্য হোয়াইট রোলার।
এর আগে ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস মোকাবিলায় রাজধানী বেইজিং-এ যে শিয়াওতাংশান হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছিল – তার অনুকরণেই হুশেনশান হাসপাতালটি তৈরি করা হচ্ছে উহানে। শিয়াওতাংশান হাসপাতালটি তৈরি করা হয়েছিল মাত্র সাতদিনে। বলা হয় যে দ্রুত গতিতে হাসপাতাল তৈরির বেলায় এটা ছিল বিশ্ব রেকর্ড।
একজন কর্মকর্তা ইয়াংঝং হুয়াং বলছেন, চীনে এই হাসপাতালটির মতো প্রকল্প খুব দ্রুত বাস্তবায়নের ইতিহাস আছে। বেইজিং-এর হাসপাতালাটির মতো উহানের এই হুশেনশান হাসপাতালটিও আগে থেকে তৈরি ছোট ছোট ভবন একসঙ্গে জোড়া দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে।
হুয়াং আরও বলেছেন, ‘নির্মাণ কাজ খুব দ্রুত শেষ করার জন্য সারা দেশ থেকে প্রকৌশলীদের উহানে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রকৌশল কাজে চীন খুবই দক্ষ। পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষে এটা কল্পনা করাও কঠিন। কিন্তু এটা করা সম্ভব।’
এর আগে ২০০৩ সালে ২৪টিরও বেশি দেশে সার্স ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল। সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১০০ জন।