জায়েদ ইবনে সা‘নাহ। একজন ইহুদি। একবার নবীজী তার থেকে কিছু ধার নিয়েছিলেন। পরিশোধের সময় এখনো আসেনি। আরো তিন দিন পর পরিশোধের কথা। নবীজী হাঁটছিলেন। সাথে ওমর রা:। এমন সময় হঠাৎ সেই ইহুদি তেড়ে এসে নবীজীর কাপড় গুটিয়ে ধরল। কণ্ঠে তার কর্কশ স্বর। গলায় বজ্রধ্বনি- ‘তোমরা বনী আবদুল মুত্তালিবের লোকেরা ঋণ পরিশোধে বড় টালবাহানা কর!’
ওমর রা:-এর মতো বীর-বাহাদুরের সামনে প্রিয় নবীজীর সাথে এমন আচরণ! তিনি কি আর সহ্য করতে পারেন! গর্জে উঠলেন তিনি। এ দেখে নবীজী হাসছিলেন। মিটমিট করে। একটু পর কোমলকণ্ঠে বললেন, ‘ওমর! আমি এবং সে দুজনই তোমার কাছে অন্য কিছুর মুখাপেক্ষী ছিলাম। তুমি আমাকে সুন্দরভাবে ঋণ পরিশোধ করতে বলতে। আর তাকে বলতে, সুন্দরভাবে পাওনা তলব করতে।’
সুবহানাল্লাহ! কত সুন্দর উত্তর! একজন সাহাবীকে বলছেন, নিজেকে সদুপদেশ দেয়ার জন্য। কত বড় বিনয়!
নবীজী বললেন, আসলে ঋণ পরিশোধের আরো তিন দিন বাকি আছে। এরপর ওমর রা:-কে বললেন, তার পাওনা পরিশোধ করে দাও এবং বাকি এ তিন দিনের হিসেবে তাকে আরো ত্রিশ সা’ পরিমাণ বাড়িয়ে দাও।
নবীজীর এ মহানুভবতা ইহুদির মনে দাগ কাটল। ইহুদি বুঝল, তার আচরণটা অন্যায় হয়েছে। সময়ের আগেই সে পাওনা চেয়েছে। চাওয়ার ধরনটাও হয়েছে খুব খারাপ। একজন মানুষকে এভাবে কাপড় চেপে ধরা ঠিক হয়নি। কিন্তু এরপরও যে তিনি কিছুই বললেন না! উল্টো আরো বাড়িয়ে দিতে বললেন। এমন ভালো মানুষও কি হয়!
নবীজীর এ অনুপম আচরণে বদলে গেল ইহুদির মন। অন্ধকার ছেড়ে সে পেল আলোর সন্ধান। আলোকিত জীবনের, আলোকিত ভুবনের। নবীজীর ক্ষমা ও মহানুভবতা দেখে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হলো চিরজীবনের জন্য। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ২২৩৭, ৬৫৪৭, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস : ১৩৮৯৮)
আমরা তো এমন মহানুভব নবীরই উম্মত। তাই এসো, প্রতিজ্ঞা করি, আমরা কখনো কাউকে কষ্ট দেব না। কেউ আমাদের কষ্ট দিলে কিংবা অন্যায় আচরণ করলে উদারমনে তাকে ক্ষমা করে দেব। আমরা ক্ষমাশীল মানুষ হতে চেষ্টা করব। তাহলে ক্ষমাশীল আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।