অবৈধ পথে স্বপ্নের ইউরোপে পৌঁছাতে গিয়ে প্রতিনিয়তই মৃত্যু হচ্ছে বাংলাদেশি তরুণদের। গত একমাসে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে প্রবেশ করতে গিয়ে বরফে জমে ও অসুস্থ হয়ে পথে মারা গেছেন ১১ জন বাংলাদেশি। যাদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। সর্বশেষ মারা গিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলার ঠাকুরভোগ গ্রামের তরুণ তানিল আহমেদ।
জানা যায়, তানিল পরিবারের বড় ছেলে। তাই পরিবারের প্রতি দায়িত্বের কথা ভেবেই অবৈধ পথে পাড়ি জমান বিদেশে। গন্তব্য ছিল গ্রিস। তাই বিভিন্ন দেশ পাড়ি দিয়ে ইরান থেকে তুর্কি ঢোকার পথে অতিমাত্রায় ঠান্ডা ও বরফে জমে রাস্তায় মারা গিয়েছেন তানিল। তানিলের চাচা জানান, ইরানে আসার পর দালালরা তাকে অনেক নির্যাতন করায় সেখান থেকেই সে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।
দালালদের নানা প্রলোভনে পড়ে এই মৃত্যুপথ বেঁছে নিচ্ছেন গ্রামের সহজ সরল কিছু মানুষ। যাদের সরলতাকে পুঁজি করে দালালরা রাতারাতি বনে যাচ্ছেন কোটিপতি, সাধারণ মানুষ হচ্ছেন প্রতারিত।
অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে ইউরোপের দেশে আসতে ভারত-পাকিস্তান-ইরান-তুর্কি হয়ে গ্রিসে প্রবেশ করে বেশির ভাগ মানুষ। সাধারণত দালাল ধরেই আসতে হয় এ সব রুট দিয়ে। তবে অনেকেই তুর্কি পর্যন্ত ভিসা নিয়ে আসেন। তারপর তুর্কি থেকে দালাল ধরে গ্রিসে প্রবেশ করে। অনেকেরই মূল গন্তব্য গ্রিস অথবা গ্রিসকে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা। এই যাত্রায় যাদের ভাগ্য ভালো তারা জীবিত অবস্থায় গ্রিসে পৌঁছাতে পারেন। কিন্তু অনেকেই রাস্তায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তুর্কি সীমান্তবর্তী বিভিন্ন ক্যাম্পে আটকা থাকতে হচ্ছেন। যাদের কোনো খবর দেশে থাকা পরিবারের লোকজন পাচ্ছেন না।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে ইউরোপ যাত্রায় নতুন একটি রুট বের করেছে দালালরা। সেটি হলো- অবৈধ প্রবাসীদের প্রথমে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি আলবেনিয়াতে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে গ্রিসে প্রবেশ করানো হয় তাদের। আলবেনিয়া পর্যন্ত আসতে তেমন একটা অসুবিধা না হলেও গ্রিসে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কিছুদিন পর পুলিশ গ্রেপ্তার করে বিনা অপরাধে ১৮ মাসে জন্য ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রাখছেন প্রবাসীদের।
সম্প্রতি গ্রিস সরকার বাংলাদেশিসহ বেশ কিছু দেশের দালালদের গ্রেপ্তার করেছেন। এরপর থেকে অনেকটাই কমে এসেছে গ্রিস হয়ে ইতালি-ফ্রান্স বা জার্মানি যাওয়ার প্রবণতা।