বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের প্রথম কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ফলে সবার আগে ফাইনালে স্থান করে নিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ছক্কা হাঁকিয়েই দলের জয় নিশ্চিত করেন আন্দ্রে রাসেল। সেই সাথে দলকে নিয়ে গেলেন শিরোপা জয়ের শেষ লড়াইয়ের মঞ্চে। চতুর্থ শিরোপা জয়ের দোরগোড়ায় এখন ইমরুল কায়েসরা। এই জয়টি ছিল বিপিএলে কুমিল্লার টানা ১০ম জয়।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিনের ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
কুমিল্লাই প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে যাবে প্রথম ইনিংসে সিলেটের ব্যাটিংয়ের পর তা অনেকটাই অনুমেয়ই ছিল। কেননা আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১২৫ রানেই থমকে যায় সিলেটের ইনিংস। ছোট এই লক্ষ্যটা আরো সহজ হয়ে যায় সুনিল নারিনের ব্যাটে, ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে মাত্র ১৮ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন। যেখানে ছিল ৩টি চারের সাথে ৪টি ছক্কার মার।
তবে আজো ব্যর্থ লিটন দাস, ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ১০ বলে ৭ রান করে সীমানায় বাঁধা পড়েন তিনি। ওয়ানডাউনে নামা জনসন চার্লসও ফিরেন দ্রুত, রান আউটের ফাঁদে পড়ে আউট হন মাত্র ৪ রান করে। অধিনায়ক ইমরুল কায়েসও হাল ধরতে পারেননি, ১৩ করে ফিরেন এই ব্যাটার। কুমিল্লার রান তখন ১০.১ ওভারে ৪ উইকেটে ৭৩।
সেখান থেকে দলের হাল ধরেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। প্রথমে মইন আলিকে নিয়ে ২৪ বলে ৩৪ ও পরে আন্দ্রে রাসেলের সাথে ১৩ বলে ২৩ রানের জুটি গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করেম এই অলরাউন্ডার। মোসাদ্দেক ২৭ বলে ২৭ ও আন্দ্রে রাসেল অপরাজিত ছিলেন ১০ বলে ১৫ রানে। মাঝে জাকের আলি আউট হন ০ রানে।
২০ বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেটের জয় পায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সিলেটের হয়ে এইদিন ষষ্ঠ বোলার হিসেবে বল হাতে দেখা দেন মাশরাফী। মাত্র ১ ওভারই বল করেন তিনি, দেন ১০ রান। তবে বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন রুবেল হোসেন, ৩ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। ১টি উইকেট নিয়েছেন তানজিম সাকিব।
এর আগে ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। খেলতে পারেনি পুরো ২০ ওভারও, ১৭.১ ওভারে মাত্র ১২৫ রানেই থেমেছে সিলেটের ইনিংস। শেষ ৮ রানে ৪ উইকেট হারায় তারা। এইদিন ব্যর্থ ছিলেন তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসান, রায়ান বার্লরা। ইনিংস বড় করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম।
সিলেটকে ধ্বসিয়ে দেয়ার শুরুটা করেন আন্দ্রে রাসেল, দ্বিতীয় ওভারেই আফগান শফিকুল্লাহ গাফারিকে ফেরান এই অলরাউন্ডার। একই ওভারে কোন রান যোগ করার আগেই রান আউট হয়ে ফেরেন তৌহিদ হৃদয়। পরের ওভারেই ৪ বলে ২ করে ফিরেন ইনফর্ম জাকির হাসানও। ফলে মাত্র ৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় সিলেট।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তাকে সঙ্গ দিতে এইদিন ব্যাট হাতে পাঁচ নম্বরে নেমে আসেন সিলেট অধিনায়ক মাশরাফী বিন মর্তুজা। দু’জনে মিলে পাল্টা আক্রমণ করে বিপদমুক্ত করেন দলকে। গড়েন ৩৮ বলে ৫৬ রানের জুটি। রাসেলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ১৭ বলে ২৬ করে মাশরাফী ফিরলে ভাঙে এই জুটি।
পরের ওভারেই তানভীর ইসলামের জোড়া আঘাত, পরপর দুই বলে ফিরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও রায়ান বার্ল। দারুণ খেলতে থাকা শান্ত আউট হন ২৯ বলে ৩৮ রান করে। আউট হবার আগে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক আসরে চার শতাধিক রান করার কীর্তি গড়েন শান্ত। বার্ল আউট হন ০ রানে।
ফের ৬ রানের মাঝে ৩ উইকেট হারিয়ে সিলেটের সংগ্রহ তখন ১০.৩ ওভারে ৬ উইকেটে ৭৮ রান। সেখান থেকে আশা দেখান মুশফিকুর রহিম, জর্জে লিন্ডেকে নিয়ে ৩০ বলে ৩৯ রানের জুটি গড়ে মানসম্মত সংগ্রহের দিকে হাঁটতে থাকে সিলেট। তবে তা আর হয়নি, ১৫.২ ওভারে মুশফিক ২২ বলে ২৯ করে আউট হলে শেষ ৩ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৮ রান যোগ করতে পারে সিলেট। ১৭.১ ওভারে ১২৫ রানেও অলআউট হয় তারা।
দুটি করে উইকেট নেন আন্দ্রে রাসেল, তানভীর ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান। মইন আলি, সুনিল নারিন ও মুকিদুল ইসলাম নেন ১টি করে উইকেট।