প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে পূর্ব এশিয়ার দেশ চীনে এখন চলছে মৃত্যুর মিছিল। নতুন এ ভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ নামে রোগে এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রাণ গেছে প্রায় ১৫শ মানুষের। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবারই মারা গেছে ১১৬ জন। এ ছাড়া ৫১ হাজার ৯৮৬ জনে দাঁড়িয়েছে মোট আক্রান্তের সংখ্যা। চীন ছাড়াও এখন পর্যন্ত হংকং, ফিলিপাইন ও জাপানে ৩ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এ ছাড়াও করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে আরও ২৭টি দেশে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এমন পরিস্থিতিতে করোনা নিয়ে যখন গোটা বিশ্ব উদ্বিগ্ন, তখন আফ্রিকায় দেখা দিয়েছে নতুন আতঙ্ক।
মহাদেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাষ্ট্র নাইজেরিয়ার তিনটি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে আরেক প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ। এর থেকে সৃষ্ট লাসা জ্বরে দেশটিতে ৭০ জনের প্রাণ গেছে, যার মধ্যে বৃহস্পতিবারই মারা গেছে ৮ জন, মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭২ জনে।
নাইজেরিয়ার ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (এনসিডিসি) বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, লাসা জ্বরে দেশটির আন্ডো, ডেলটা ও কাদুনা প্রদেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ তিন প্রদেশে নতুন করে ৪ স্বাস্থ্যকর্মী লাসা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। কোনো অবস্থাতেই মৃত্যুর মিছিলের রাশ টানা যাচ্ছে না।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, ১৯৬৯ সালে নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় লাসা শহরে প্রথম এ ভাইরাসটি আবিষ্কার হয়। ভাইরাসটি মূলত ছড়ায় ‘মস্তোমিস’ নামে এক ধরনের আফ্রিকান নেংটি ইঁদুরের চর্বি ও লালার মাধ্যমে। সংক্রামিত ইঁদুরের মল বা মূত্রের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমেই মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। একই সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের যে কোনো ধরনের ফ্লুইড (রস) যেমনÑ লালা, রক্ত, ঘাম, বীর্যের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমেও লাসা জ্বর ছড়ায়।
ডব্লিউএইচওর তথ্যানুযায়ী, লাসা জ্বরের লক্ষণ খুব ধীরে ধীরে প্রকাশ হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রথমে জ্বর, দুর্বলতা এবং অস্বস্তির মতো সাধারণ লক্ষণ প্রকাশ পায়। কয়েক দিন পর শুরু হয় গলা, মাথা, পেশি ও বুকে ব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব। অবস্থা গুরুতর আকার ধারণ করলে মুখ ফুলে যাওয়াসহ মুখ, নাক, যোনি বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট থেকে রক্তপাতও হতে পারে। তবে জ্বরটি সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর গর্ভবতী নারীদের জন্য। কারণ গর্ভাবস্থায় লাসা জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যু বা গর্ভপাত ঘটে।
এনসিডিসি জানায়, প্রায় প্রতিবছরই লাসার সংক্রমণ দেখা যায় নাইজেরিয়ার এ অঞ্চলে। অত্যন্ত গরম পড়লে, আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে গেলে জানুয়ারির মাঝামাঝির পর থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যুও হয় প্রতিবছর। আক্রান্ত রোগীকে ৬ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত আলাদা স্থানে রাখতে হয়। কারণ এ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে অন্যদের মধ্যেও এ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা থাকে।
এদিকে চীনে করোনা ভাইরাসে রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ চিকিৎসক। বিবিসি জানায়, ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল উহানের চিকিৎসক লি কর্তৃপক্ষকে নতুন এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে নিজেই বিপদে পড়েন এবং গত সপ্তাহে তিনি মারা যান। এ নিয়ে চীনের মানুষ ক্ষুব্ধ। দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের সহকারী মন্ত্রী জেং ইশিন জানিয়েছেন, ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ১ হাজার ১০২ চিকিৎসাকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া হুবেই প্রদেশের অন্যান্য এলাকায় আরও ৪০০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত। চিকিৎসা কর্মীদের সুরক্ষায় ব্যবহৃত রেসপিরেটরি মাস্ক, চশমা এবং সুরক্ষিত পোশাক সরবরাহের ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে। এক চিকিৎসক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, তিনিসহ তার আরও ১৬ সহকর্মীর শরীরে ভাইরাসটির সম্ভাব্য উপসর্গ লক্ষ করা গেছে।