মাদারীপুরের শিবচরে গতকাল দুর্ঘটনার কবলে পড়া ইমাদ পরিবহনের বাসটির (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩৩৪৮) চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর এক দুর্ঘটনার পর বাসটির রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করা হয়। এর পরও বাসটি যাত্রী পরিবহন করে আসছিল।
আগের দুর্ঘটনার পর বাসটি জব্দ অবস্থায় ছিল। গত ৪ ডিসেম্বর আদালত থেকে মুক্ত হওয়ার পর বাসটি মেরামত করে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে সায়েদাবাদ-খুলনা রুটে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছিল।
বিআরটিএর তথ্যমতে, ভারতের অশোক লেল্যান্ড কোম্পানির বাসটি তৈরি হয়েছে ২০১৭ সালে। এর নিবন্ধন নেওয়া হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। নিবন্ধনে উল্লেখ করা হয়, বাসের আসনসংখ্যা ৪০টি। এরপর প্রায় প্রতিবছরই ফিটনেস সনদ নেওয়া হয়। তবে সর্বশেষ গত ১৯ জানুয়ারি বাসটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এটি ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে খুলনা পর্যন্ত চলাচলের জন্য অনুমতি (রুট পারমিট) নেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, আগেও বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। সে সময় নিবন্ধন স্থগিত রাখা হয়। এখন আবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। এবার বাসের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। পাশাপাশি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জানা গেছে, সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে, একটি বাসের ফিটনেস সনদ দেওয়ার আগে অন্তত ৬০ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা। এর মধ্যে যানবাহনের ওজন, টায়ারের বিট, গতি ও ব্রেক ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, তা মূল বিষয়। চাকার ত্রুটি বা অন্য যান্ত্রিক সমস্যা থাকলে তা ফিটনেস সনদ নেওয়ার সময় ধরা পড়ার কথা। কিন্তু বিআরটিএ অধিকাংশ যানবাহনের পরীক্ষার সনদ দেওয়া হয় ৫-১০ মিনিটে। এ ছাড়া গাড়ি না দেখেও ফিটনেস সনদ দেওয়ার অভিযোগ আছে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, গতকাল বিআরটিএর সার্ভারে বাসটির নম্বর দিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, সেটি সাসপেন্ড রয়েছে। অর্থাৎ নিবন্ধন ও চলাচলের অনুমতি স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু এর পরেও ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, হাইওয়ে পুলিশ এবং সরকারের অন্যান্য সংস্থার নজর এড়িয়ে প্রায় আড়াই মাস ধরে বাসটি কীভাবে রাজধানীর সায়েদাবাদের মতো টার্মিনাল থেকে চলছিল- এ প্রশ্নের জবাব মিলছে না। বিআরটিএ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইমাদ পরিবহনের মালিক হাবিবুর রহমান শেখের বাড়ি গোপালগঞ্জে। তিনি থাকেন সৌদি আরবে। তার হয়ে কোম্পানি পরিচালনা করেন ওয়াহিদুল ইসলাম টুলু মিয়া। গতকালের দুর্ঘটনায় বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার মারা গেছেন।
দুর্ঘটনার জন্য যেসব কারণ অনুমান করা হচ্ছে, তার একটি হলো চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন কিংবা ক্লান্ত ছিলেন। সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালার ৩২ (৫) ধারায় চালকের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২৭ ডিসেম্বর কার্যকর হওয়া এই আইনের বিধিমালায় বলা হয়, একজন চালককে দিয়ে একটানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালানো যাবে না। এরপর কমপক্ষে আধা ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে আবার তিন ঘণ্টা গাড়ি চালানো যাবে। তবে দিনে আট ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি একজন চালককে দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না।