ইতিহাস গড়া জয় পেল দক্ষিণ আফ্রিকা, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিতেছে তারা। হঠাৎ স্কোরকার্ড দেখে মনে হতেই পারে, খেলাটা হয়তো ৫০ ওভারে। ২৫৮ রানের লক্ষ্য এত সহজে জয় করে নিলে যে কেউ ভাবতেই পারে তা! ৬ উইকেট আর ৭ বল বাকি থাকতেই কিনা জয়ের বন্দরে পা রাখে প্রোটিয়ারা!
তাছাড়া আরো একটি রেকর্ড হয়ে গেছে এই ম্যাচে, সব ধরনের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান হয়ে গেছে যেখানে; রান সংখ্যা ৫১৭! সেঞ্চুরিয়নে এইদিন বসেছিল সেঞ্চুরি মেলা, কাঁটা দিয়েই যেন তোলা হয়েছে কাঁটা। জনসন চার্লসের শতকের পর শতক হাঁকিয়েছেন কুইন্টন ডি ককও! যেখানে শেষ হাসি হেসেছেন ডি ককের দক্ষিণ আফ্রিকাই।
সিরিজে সমতায় ফিরতে মরিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা এদিন টসে জিতে আগে ব্যাট করতে পাঠায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে৷ যেখানে ৫ উইকেট হারিয়ে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ ২৫৮ রান করে ক্যারিবীয়রা। মাত্র ৩৯ বলে শতক হাঁকান জনসন চার্লস, মারেন ১১টি বিশাল ছক্কা। সুবাদে তার দল স্পর্শ করে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ২২ ছক্কার রেকর্ড।
যদিও আগে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলে মাত্র ২ রানে ক্যারিবীয়দের প্রথম উইকেট তোলে নিয়ে উল্লাসে মাতে প্রোটিয়ারা, তবে সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি৷ দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয় ১০ ওভার পর্যন্ত৷ ততক্ষণে কাইল মায়ার্স আর জনসন চার্লস মিলে স্কোরবোর্ডে যোগ করে ফেলেছেন ১৩৭ রান! অর্থাৎ মাত্র ৬০ বলে ১৩৫ রানের জুটি!
চার্লস আর মায়ার্স যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন, কে কার থেকে বেশি ব্যাট চালাতে পারেন। মাত্র ২৭ বলে ৫ চার আর ৪ ছক্কায় ৫১ রান করেও যেখানে মায়ার্স হেরে যান। এরপর পুরান দ্রুত ফিরলেও রভম্যান পাওয়েলের সাথে ২০ বলে ৪০ রান যোগ করেন চার্লস, বিধ্বংসী রূপে তোলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি শতক।
মাত্র ৩৯ বলে শতক হাঁকিয়ে প্যাভেলিয়নে ফেরার আগে করেন ১০ চার আর ১১টি ছক্কায় ১১৮ রান! গেইলকে ছাপিয়ে বনে যান ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যা চতুর্থ দ্রুততম! চার্লস ফেরার পর ঝড় তোলেন রোমারিও শেফার্ড, ১৮ বলে চার ছক্কা ও ও এক চারে ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। তাছাড়া পাওয়েল ১৯ বলে ২৮ ও ৫ বলে ১১ রান করেন ওডেন স্মিথ।
আন্তর্জাতি টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ সংগ্রহ
২৫৯ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতেই শতক হাঁকিয়ে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা,
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ১০২ রান আসে প্রোটিয়াদের স্কোরবোর্ডে, কোনো উইকেট না হারিয়েই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম উইকেটের দেখা পায় ১০.৫ ওভারে দলীয় ১৫২ রানে। ডি কক ফেরেন ৪৪ বলে সমান ১০০ রানে, যা তার প্রথম টি-টোয়েন্টি শতক।
এরপর ৪ বলে ১৬ রান করেন রাইলি রুশো ও ১০ বলে ১০ রান করে বিদায় নেন ডেভিড মিলার। মাঝে আরেক ওপেনার রেজা হেন্ড্রিকস আউট হন ২৮ বলে ১১ চার আর ২ ছক্কায় ৬৮ রান করে। ১৬ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ২১৬ রান, শেষ ২৪ বলে জয়ের জন্য চাই ৪৩ রান।
সেই সমীকরণ মেলানোর ভারটা নিজের কাঁধেই নিয়ে নেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম, ক্লাসেনকে সাথে নিয়ে ৭ বল আগেই লক্ষ্য পাড়ি দেন তিনি৷ ২১ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলে মার্করাম আর ক্লাসেন অপরাজিত থাকেন ৭ বলে ১৬ রানে।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ক্যারিবীয়দের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছিল তারা। রোববার (২৬ মার্চ) ইতিহাস গড়া এই জয় নিয়ে সিরিজে সমতা ফেরালো তারা। ফলে শেষ ম্যাচটা উভয়ের জন্য অঘোষিত ফাইনাল।