নিউইয়র্কে বাস ও বাইক লেইনের মতো চিহ্নিত স্থানে অবৈধ পার্কিং মোকাবেলায় সাড়ে পাঁচশো বাসে নতুন ক্যামেরা বসাচ্ছে এমটিএ। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আলবানিতে বাজেট অধিবেশনে এই সিদ্ধান্ত নেন স্টেইটের আইনপ্রণেতারা। এই সিদ্ধান্তের আওতায় বাস লেইনের পাশাপাশি ট্রাক লোডিং জোন, বাস স্টপ, বাইক লেইন, ইন্টারসেকশন এবং ক্রসওয়াকগুলোয় পার্ক করা গাড়ির ছবি তুলবে এমটিএ’র স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরাগুলো।
ছবি অনুযায়ী অপরাধী চালককে প্রথমবার পঞ্চাশ ডলার জরিমানা করা হবে। পরবর্তী বারো মাসের মধ্যে একই ব্যক্তি আবারো অবৈধ পার্কিং এর জন্য অভিযুক্ত হলে জরিমানার অংক বাড়িয়ে সর্বোচ্চ আড়াইশো ডলার পর্যন্ত আদায় করা যাবে। ২০১৯ সাল থেকে সাড়ে চারশো বাসে এ ধরণের ক্যামেরা স্থাপন করেছে এমটিএ। এই বছরের শেষ নাগাদ ক্যামেরাযুক্ত বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে এক হাজার করা হবে বলে জানিয়েছে তারা।
খবরটা বাস যাত্রীদের বেশ স্বস্তি দেবে। বাস-ক্যামেরা বাড়তে চলেছে। কেবল বাস লেনে গাড়ি চালানো বা পাকিংয়ে সীমাবদ্ধ না রেখে বরং বাস স্টপ, ট্রাক লোডিং জোন, বাইক লেন, মোড়, ক্রসওয়াকে গাড়ি পার্ক করে, তাদের পাকড়াও করতেও অটোমেটেড বাস লেন এনফোর্সমেন্ট ক্যামেরা সিস্টেম বসানো হচ্ছে। ফলে বাসের গতি বাড়বে, বাসযাত্রা হবে অনেক আরামদায়ক। নতুন এই প্রস্তাবে নিউইয়র্কের গভর্নর হোকুল এবং আইনপ্রণেতা পরিষদের নেতারা একমত হয়েছেন।
আর বাস লেনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে প্রথমবার জরিমানা দিতে হবে ৫০ ডলার। আর ১২ মাসের মধ্যে আবার একই ধরনের অপরাধে ধরা পড়লে প্রতিবারের জন্য দিতে হবে ২৫০ ডলার করে।
এমটিএ ঘোষণা করেছে যে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ক্যামেরা-সংবলিত বাসের সংখ্যা ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার করা হবে। এরপরই নতুন আইনের প্রসঙ্গ আসে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাস লেনে অটোমেটেড ক্যামেরা বসানোর ফলে বাসের গতি ৫ ভাগ বেড়ে যায়। ২০১৯ সালে এমটিএ এসব ক্যামেরা স্থাপন করে।
ওপেন প্লানসের সহ-নির্বাহী পরিচালক সারা লিন্ড বলেন, ‘ক্যামেরাভিত্তিক ব্যবস্থা এতই শক্তিশালী একটি হাতিয়ার যে এটি আমাদের রাস্তাগুলোকে আরো নিরাপদ করতে পারে। এটি সীমিত ব্যবস্থায় অনেক বেশি কাজ করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এর মাধ্যমে আচরণে পরিবর্তন আনা যায়।’
তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্ক সিটির উচিত হবে সম্ভব সব ধরনের সুবিধাকে কাজে লাগানো। সমর্থন প্রদানের জন্য আমরা রাজ্যের আইনপ্রণেতাদের প্রশংসা করছি।’
নিউইয়র্কের গভর্নর হোকুল গত বছরই বাস লেনের বাইরেও বাস ক্যামেরা বসানোর আইন প্রণয়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আইন পরিষদে তা পাস করানো যায়নি। তবে এবার আলবানির আইনপ্রণেতারা তাদের ‘ফিক্স দি এমটিএ’ প্যাকেজ প্রস্তাবে সম্মতি দিচ্ছেন। এই প্রস্তাবে নিউইয়র্ক সিটিতে ফ্রি বাস চালুর ব্যবস্থাও রয়েছে।
অ্যাসেম্বি সদস্য জোহরান মামদানি বলেন, ক্যামেরা বাড়ানোর এই কর্মসূচি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তিনি বলেন, পুরো কর্মসূচির লক্ষ্য হলো জনসাধারণের কল্যাণ। আর বিশ্বস্ত ও নিয়মিত পরিষেবা ছাড়া পাবলিক ট্রানজিটকে কোনোভাবেই চমৎকার বলা যাবে না।
তিনি বলেন, ক্যামেরা বাড়ানোর কর্মসূচিটি আমাদের খুবই ভালো লেগেছে। এটি বাস চলাচলে যেসব সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো দূর করবে। এখন তো অনেক সময় হাঁটার চেয়েও কম গতিতে বাস চলে।
নিউইয়র্ক সিটির বাসগুলো বর্তমানে গড়ে ঘণ্টায় মাত্র ৮.০৯ মাইল বেগে চলাচল করে। অটোমেটেড বাস ক্যামেরা কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হলে বাস কার্যক্রম ও নিরাপদ সড়ক- উভয়টিই গতিশীল করবে।
রাইডার্স অ্যালায়েন্স ডিরেক্টর অব পলিসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন্সের ড্যানি পার্লস্টেইন বলেন, ‘যাত্রীদের দরকার দ্রুত ও বিশ্বাসযোগ্য বাস পরিষেবা। আর বাসের গতিপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এর গতি মন্থর করে দেয়। ফলে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান দরকার।’
রাজ্য বাজেটে এমটিএর আর্থিক ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তবে ভাড়া যাতে বেশি না বাড়ে সেজন্যও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাস ভাড়া ৫ ভাগ না বাড়িয়ে ৪ ভাগ বাড়ানোর ব্যবস্থা করার জন্য রাজ্য ৬৫ মিলিয়ন ডলারের সংস্থান করবে।
এছাড়া পেরোল ট্যাক্স বাড়ানোর পাশাপাশি গভর্নর হোকুল ক্যাসিনো থেকে অর্থ এমটিএকে প্রদান করার প্রস্তাব করেছেন।