সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) যেসব সড়ক নির্মাণ করেছে, তার মধ্যে কিলোমিটার হিসেবে সর্বোচ্চ খরচ পড়বে পূর্বাচলের সড়কে। পূর্বাচলের ৩০০ ফুট রাস্তা থেকে মাদানী অ্যাভিনিউ-সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত সোয়া তিন কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের খরচ ৪৯৬ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৬৯৬ কোটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ ২শ কোটি (প্রায় ৪০ শতাংশ) বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
পূর্বাচল থেকে জলসিঁড়ি আবাসন এলাকা হয়ে সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে অবকাঠামো নির্মাণের চেয়ে বেশি টাকা যাচ্ছে জমি অধিগ্রহণে। জমি অধিগ্রহণে উচ্চ খরচের কারণে সমজাতীয় প্রকল্পগুলোর তুলনায় পূর্বাচল থেকে জলসিঁড়ি আবাসন এলাকা হয়ে সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে।
আগামী ১৪ মে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হবে। এরই মধ্যে জমির উচ্চমূল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ‘স্বল্প সময়ে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের ফলে, নাকি রাস্তার অ্যালাইনমেন্ট (পথ-নকশা) পরিবর্তনের কারণে এত ব্যয় বেড়েছে, তার কারণ সভায় উপস্থাপন করা যেতে পারে।’
এতে বলা হয়েছে, ‘শ্রেণি পরিবর্তনকৃত ভূমির মধ্যে কতটুকু জলসিঁড়ি আবাসন কর্তৃপক্ষের এবং কতটুকু অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় জনসাধারণের মালিকানাধীন, তার সুস্পষ্ট বিভাজন সভায় উপস্থাপন করা যেতে পারে।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নথি অনুযায়ী, অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে ব্যক্তিমালিকানার বাইরে ৮৬ শতাংশ অর্পিত এবং ১ একর ৬৫ শতাংশ খাসজমি রয়েছে। অধিগ্রহণকৃত ৩৪ দশমিক ৭৩ একর জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। অর্থাৎ নির্মাণাধীন সড়কের পাশে আবাসন প্রকল্পের প্লট অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।
বৈঠকের কার্যপত্র অনুযায়ী, ৬৯৬ কোটি টাকার মধ্যে ৩৪৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে ৩৪ দশমিক ৭৩ একর জমি অধিগ্রহণে। ডিপিপি প্রণয়নের সময় ৩৩ দশমিক ০৭ একর জমি অধিগ্রহণে খরচ ধরা হয়েছিল ১৪৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে জমি অধিগ্রহণ ব্যয়। তবে ক্ষতিপূরণ খাতে খরচ কমছে ৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
জানা গেছে, আবাসন প্রকল্পের কারণে কম দামের ফসলি ও নিচু জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়েছে। ফলে কম দামে কেনা জমির জন্য উচ্চ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন প্লট মালিকরা। অথচ রাস্তার কারণেই তাদের জমির দাম বেড়েছে।
প্রকল্পের অধীনে সোয়া তিন কিলোমিটার সড়কে সেতু রয়েছে চারটি। গত বছরের জুন পর্যন্ত চার বছরে প্রকল্পের ৩৮৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। নির্মাণ অগ্রগতি হয়েছে ৫৫ দশমিক ২৭ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, ‘অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের অধিকাংশ পাচ্ছে বড় বড় আবাসন প্রকল্প। অথচ এ রাস্তা নির্মাণে তাদেরই লাভ বেশি হয়েছে।’
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ড. আহাদ উল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রকল্পটির খুব বেশি তথ্য এ মুহূর্তে বলতে পারব না।’
সওজের তথ্যমতে, পূর্বাচল থেকে জলসিঁড়ি আবাসন এলাকা হয়ে সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের অক্টোবরে অনুমোদন পায়। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৫৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ডিপিপির প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয় ৪৯৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় আরেক দফা ডিপিপি সংশোধন করতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে সওজ।