বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

উদ্যোক্তা হতে পারবেন না ঋণখেলাপিরা

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩
  • ৭৭ বার

ডিজিটাল ব্যাংক নীতিমালা আসছে। এ ব্যাংক নীতিমালায় ঋণখেলাপিদের জন্য দুঃসংবাদ বয়ে আনছে। আর তা হলো ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে হলে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি হওয়া যাবে না। কোনো ঋণখেলাপি এ ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে হলে তাকে পুরো খেলাপি ঋণ আগে পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ ধরনের একটি নীতিমালার খসড়া নিয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। শিগগিরই এটা চূড়ান্ত করা হবে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদে পাঠানো হবে। পর্ষদ অনুমোদন দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক সার্কুলার জারি করবে। এরপরই আগ্রহীদের কাছ থেকে আগ্রহপত্র চাওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সূত্র জানায়, ডিজিটাল ব্যাংকে নগদ অর্থের কোনো লেনদেন হবে না। শুধু অনলাইনে লেনদেন হবে। এর শুধু প্রধান কার্যালয় থাকবে। কোনো শাখা থাকবে না। কোনো এজেন্টও থাকবে না। প্রতিটি ব্যাংকের একটি অ্যাপ ও অনলাইনে একটি প্লাটফরম থাকবে। তাতে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় লেনদেন করা যাবে। এতে নগদ টাকার ব্যবস্থা বাবদ বছরে ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। নোট জালকারীদের তৎপরতা কমবে। মানি লন্ডারিংয়ের প্রবণতাও কমে যাবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হবে। সে ক্ষেত্রে দেশে অনেক ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের সুযোগ রয়েছে। তারা বিশেষ কোনো অঞ্চল বা সারা দেশে কার্যক্রম চালাতে পারবে।

এ ব্যাংকের পুঁজি কম রাখা হয়েছে। যাতে অনেকে ব্যাংকের জন্য আবেদন করতে পারে। নীতিমালায় বলা হয়, ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য ন্যূনতম মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা। প্রত্যেক উদ্যোক্তা শেয়ারের কমপক্ষে হবে ৫০ লাখ টাকার শেয়ার ধারণ করতে হবে। এ হিসাবে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা সাড়ে ১২ কোটি টাকা মূলধন লাগবে। উদ্যোক্তা থাকবে কমপক্ষে ১০ জন। এর মধ্যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেশি নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে আলোচনা করে নীতিমালায় বিশেষ সুবিধা নেয়া যাবে। এটি নির্ভর করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের ওপর। শক্ত আর্থিক ভিত্তি রয়েছে এমন কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা কোম্পানির ক্ষেত্রে নীতিমালায় কিছুটা ছাড় দেয়া হবে। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও হতে হলে ব্যাংকিং পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর মধ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, আইন-কানুন, নীতিমালা, সার্কুলার এসব বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী প্রধান নির্বাহী নিয়োগ পাবেন।

প্রসঙ্গত, গত ১ জুন সংসদে উপস্থাপিত জাতীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী একটি ডিজিটাল ব্যাংক চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করা হবে। এ ঘোষণাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রণীত প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকিংবিষয়ক খসড়া নীতিমালায় এ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নীতিমালার খসড়াটি এখনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। অচিরেই এটি চূড়ান্ত করা হবে। তারপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে সার্কুলার জারির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে এ বিষয়ে জানানো হবে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করা হবে। পক্ষে সেগুলো যাচাই বাছাই করে অনুমোদন দেয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্স পাওয়ার পরই কেবল ব্যবসা শুরু করা যাবে। ব্যবসা শুরুর পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে শেয়াবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে। যে পরিমাণ অর্থ নিয়ে ব্যাংকের ব্যবসা শুরু হয়েছে, সেই পরিমাণ অর্থের শেয়ার বাজারে ছাড়তে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, তারা চায় আগামী অর্থবছরের মধ্যেই কয়েকটি ডিজিটাল ব্যাংক দেশে ব্যবসা শুরু করুক। এ জন্য নীতিমালায় ছাড় দেয়া হবে। ধীরে ধীরে এ ক্ষেত্রে নীতিমালায় পরিপক্কতা আনা হবে। এ জন্য বাস্তবতার আলোকে নীতিমালাটিও সংশোধন করা হবে।
নীতিমালায় বলা হয়, এ ব্যাংক পরিচালিত হবে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায়। ব্যাংকের পরিচালকের সংখ্যা কত হবে, গ্রাহকদের নিরাপত্তা ও পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইনকে অনুসরণ করা হবে। এর আলোকেই নীতিমালাটি প্রণীত হচ্ছে। ওই নীতিমালায় প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনো বিধিবিধান জারি করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে রাখা হয়েছে। একই সাথে আমানতকারী বা ব্যাংকের স্বার্থবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার প্রমাণ পেলে যেকোনো পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অপসারণ করতে পারবে। আমানতকারীদের স্বার্থে ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিধিবদ্ধ আমানতও জমা রাখতে হবে। গ্রাহকদের লেনদেনের জন্য এ ব্যাংক কোনো চেক, কার্ড বা উপকরণ চালু করতে পারবে না। কেবল অ্যাপ বা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে গ্রাহক তার হিসাবে প্রবেশ করে টাকা স্থানান্তর করতে পারবেন। লেনদেনের নিরাপত্তার জন্য ব্যাংক থেকে গ্রাহকের মোবাইল বা ই-মেইলে ওটিপি পাঠানো যাবে। এ জন্য ব্যাংককে একটি আধুনিক ও নিরাপদ অনলাইন পদ্ধতি তৈরি করতে হবে। এর মাধ্যমেই কেবল লেনদেন হবে। এর মাধ্যমে একজন গ্রাহক অন্য গ্রাহকের সাথে যেমন লেনদেন করতে পারবে, তেমনি যেকোনো কেনাকাটার বিলও পরিশোধ করতে পারবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেও ডিজিটালও ব্যাংককে অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। আপাতত লেনদেন শুধু ডিজিটাল ব্যাংকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হবে। পরবর্তীতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির সাথেও লেনদেন চালুর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

নীতিমালায় বলা হয়, গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো গ্রাহক কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপি হয়ে থাকলে বা আগে ছিলেন, এখন নেই বা এখনো খেলাপি আছেন এমন কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য কিংবা তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। এমন কি
ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য রায়ের অপেক্ষায় থাকলেও তিনি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক হতে পারবেন না।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com