বার ঘন্টার ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২১জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত হওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। তারা সবাই সিলেটে মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন।
হবিগঞ্জ সংবাদদাতা এম এ মজিদ জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো চ-১৯-৫১৬১) মহাসড়কের পাশে গাছের সাথে ধাক্কা খাওয়ার ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫ জন। নিহতদের মধ্যে সাতজন পুরুর ও একজন নারী। তবে হতাহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে তারা সবাই মাইক্রোবাসের আরোহী ছিলেন। আহত পাঁচ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
এদিকে ব্রাহ্মনবাড়িয়া সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসে আগুন ধরে ৬ জন দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। আহত হয়েছেন মাইক্রোবাসের ৪ আরোহী।
শুক্রবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উপজেলার ভাটি কালিসীমা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে চারজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন, সোহান (২০), সাগর (২২), রিফাত (১৬) ও ইমন (১৯)। আহতরা হলেন, শাহিন (৩০), বিজয় (১৯), আবীর (১৯) ও জিসান (২৪)। তাদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহতরা নারায়ণগঞ্জ থেকে মাজার জিয়ারতের উদ্দেশে সিলেট যাচ্ছিলেন।
খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম জানান, মাইক্রোবাসে করে ১০ জন নারায়ণগঞ্জ থেকে সিলেট মাজার জিয়ারতের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রামপুর এলাকায় সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার দিকে যাওয়া লিমন পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষে হয়। এতে ঘটনাস্থলে মাইক্রোবাসের ছয় যাত্রী নিহত হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত চারজনকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও মাইক্রোবাসটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ফেনীর সোনাগাজীতে সড়কে বাইক দুর্ঘটনায় দুই বন্ধু নিহত হয়েছে। নিহত মো. আজিজুল হক সাহেদ (২৫) ও জিয়া উদ্দিন বাবলু (২২)’র বাড়ি মিরসরাইয়ে। এরমধ্যে সাহেদ মিরসরাই উপজেলার ৪ নং ধুম ইউনিয়নের নাহেরপুর গ্রামের তাজুল ইসলামে ছেলে ও বাবলু একই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ইমামপুর গ্রামেরে মৃত বশির আহম্মদের ছেলে। বাবলু মিরসরাই মাদরাসা থেকে এবার কামিল পরীক্ষার্থী ছিলেন।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলেই মারা যান আজিজুল হক সাহেদ। গুরুতর আহত অবস্থায় বাবলুকে প্রথমে ফেনী জেনালের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত বাবলুর বড় ভাই সোহেল খাঁন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তারা কয়েকটি মোটরসাইকেল যোগে বন্ধুরা সোনাগাজীতে ঘুরতে যায়। মতিগঞ্জ বাজারের পাশে রাস্তায় একটি ব্রিজের কাজ চলছিলো। তারা দেখতে না পারে মোটরসাইকেল সহ নিচে পড়ে যায়। পরে অন্য বন্ধুরা উদ্ধার করে হাসাপাতালে নিয়ে গেছে। সাহেদ ঘটনাস্থলে মারা যায়। আমার ভাই রাত ২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে মারা গেছে।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মাঈন উদ্দিন দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলে সাহেদ নিহত হলেও পরবর্তীতে বাবুল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়।
ময়মনসিংহ সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ভালুকা উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় পিকআপের চালকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুজন আহত হন। শুক্রবার ভোরে উপজেলার মেহরাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন নেত্রকোনার ঠাকুরাকোনা গ্রামের পিকআপ ভ্যানের চালক রাজন রবিদাস (২২) ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার তালাশ কোর্ট এলাকার আবদুস সালামের ছেলে মো. আজিম (২৩)।
ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার মেহরাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে একটি বড় পিকআপের সঙ্গে ধাক্কা খায় মাছভর্তি আরেকটি ছোট পিকআপ। এতে ছোট পিকআপের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে রাজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ সময় আরও তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখানে নেয়ার পর চিকিৎসক আজিম নামের আরেক জনকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাভার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ঢাকার সাভারে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টায় বাস ও ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-আরিচা ও আবদুল্লাপুর-বাইপাইল সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন রাজধানীর শেওরাপাড়ার কাজী নাজমুল হক (৪১) ও নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের কনস্টেবল আকাশ আহমেদ (২২)।
আশুলিয়া থানার পুলিশ জানায়, গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে মোটরসাইকেলে ঢাকার বাসায় যাওয়ার পথে নাজমুল হক বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের জামগড়া এলাকায় রিকশার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বাসের নিচে গিয়ে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। অন্যদিকে সাভার হাইওয়ে থানার পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে আশুলিয়ার শ্রীপুরের নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে নারায়ণগঞ্জে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন আকাশ। রাত একটার দিকে সাভারের উলাইল এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি ট্রাক মোটরসাইকেলসহ তাকে চাপা দিলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিজাউল হক ও সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ কনস্টেবলসহ দুজন নিহত হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছেন।