অবসরে যাওয়ার পর সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের অর্থ পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেই ভোগান্তি পরিহারে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ উদ্যোগে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পেনশন পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। ছুটি নগদায়ন মঞ্জুরির আদেশ বিল দাখিলের তিন কর্মদিবসের মধ্যে পেনশনভোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে পেনশনের অর্থ।
সূত্র জানিয়েছে, সরকারি চাকরিজীবীরা অবসরকালীন ছুটিতে যাওয়ার পর গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, অর্জিত ছুটির টাকা ও অবসরভাতা পান। গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও অর্জিত ছুটির অর্থ পান একসঙ্গে। অবসর ও চিকিৎসাভাতা পেনশনহোল্ডার আজীবন পেয়ে থাকেন। প্রত্যেক পেনশনহোল্ডার মূল বেতনের ৯০ শতাংশ পেনশন ভাতা পান। পেনশনহোল্ডার মারা গেলে তার স্ত্রী আজীবন এ সুবিধা পান।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আজিজুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, সরকারি চাকরিজীবী অবসরে যাওয়ার পর তার মূল বেতনের ৯০ শতাংশ পেনশন পান। এর মধ্যে অর্ধেকের (৪৫ শতাংশের) ২৩০ গুণ এককালীন এবং বাকি ৪৫ শতাংশ মাসিক পেনশন পেয়ে থাকেন। তবে কেউ চাইলে পুরো অর্থ একসঙ্গে নেওয়ার সুযোগ আছে।
সূত্র জানিয়েছে, অনেক সময় অবসরে যাওয়ার পর পেনশনের অর্থ পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেই ভোগান্তি পরিহারে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পেনশনে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোগান্তি কমাতে ছুটি নগদায়ন মঞ্জুরির আদেশ বিল দাখিলের তিন কর্মদিবসের মধ্যে পেনশনভোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে পেনশনের অর্থ।
সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়ে পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। আদেশে বলা হয়, ছুটি নগদায়ন মঞ্জুরির আদেশ বিল দাখিলের তিন কর্মদিবসের মধ্যে পেনশনভোগীর ব্যাংক হিসেবে ওই অর্থ চলে যাবে।
এ ছাড়া মাসিক সুবিধার অর্থ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়, বিভাগ শুধু পেনশনের বিষয়টি দেখার জন্য একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে।
সূত্র জানিয়েছে, অবসর গ্রহণের আগে ইএলপিসি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীকে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। ওই আবেদনে প্রাপ্য ছুটি, ছুটি নগদায়ন, ভবিষ্যৎ তহবিলের স্থিতি উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। এ আবেদন পাওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।
পেনশন মঞ্জুরির কাগজপত্র পাওয়ার ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পেনশন নির্ণয়সংক্রান্ত হিসাব যথাযথভাবে যাচাই করে সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ অফিস পেনশন পরিশোধ আদেশ (পিপিও) জারি করা হবে। আনুতোষিকের টাকার চেক বা ইএফটি পিআরএল শেষ হওয়ার পর দিন চূড়ান্ত অবসরগ্রহণের দিন সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর কাছে বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্র জানিয়েছে, অডিট আপত্তি থাকিলে ৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। চূড়ান্ত অবসর গ্রহণের এক বছরের মধ্যে বিভাগীয় মামলা থাকলে নিষ্পত্তি করতে হবে। প্রতিমাসের পেনশন-পরবর্তী মাসের এক তারিখে পেনশনারের ইএফটির মাধ্যমে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে হবে।
স্বপ্ন দেখাচ্ছে বেসরকারি খাতেও : দেশে প্রচলিত নীতি অনুযায়ী শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই নিয়মিত পেনশন পাচ্ছেন। আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ক্ষেত্রেও পেনশনের ব্যবস্থা আছে সীমিত পর্যায়ে। বেসরকারি খাতে পেনশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বেসরকারি খাতের কর্মীরা বড় ধরনের কোনো আর্থিক সুবিধা ছাড়াই দীর্ঘ চাকরি জীবনের ইতি টানেন। অথচ দেশে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীর চেয়ে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীর সংখ্যা অনেক বেশি।
বেসরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত সব কর্মজীবী মানুষের জন্য একটি টেকসই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। সর্বজনীন পেনশন সুবিধা কার্যকর করতে খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। বিশ্বের অন্য দেশে কীভাবে সর্বজনীন পেনশন সুবিধা বাস্তবায়ন করছে সে বিষয়টি অনুসরণ করেই নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে অর্থ বিভাগ।
এ নীতিমালার আওতায় সব নাগরিকের জন্য পেনশন সুবিধা নিশ্চিত করতে সর্ব প্রথম ‘বাংলাদেশ সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের সুপারিশ করেছে। ইতোমধ্যে খসড়া নীতিমালা পর্যালোচনার জন্য অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত করবে নীতিমালা।
জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন সুবিধার আওতায় সমাজের পিছিয়ে পড়া ‘কর্মক্ষম নাগরিক’ যাদের বয়স ১৮-৫৫ বছরের মধ্যে তাদের পেনশন সুবিধা দেবে সরকার।