দেশে সাম্প্রতিককালে অপরাধ জগৎ নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত খবর ছিল ক্যাসিনোকা-। আর এতে যে দুজনের নাম পত্রপত্রিকায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল তারা হলেন ক্যাসিনোসম্রাট আখ্যাপ্রাপ্ত বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন এবং ঠিকাদার ও যুবলীগসংশ্লিষ্ট জিকে শামীম। তাদের মধ্যে শেষোক্ত জন কীভাবে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেল, তাও আবার দুদিনে দুটি মামলায় দুটি পৃথক বেঞ্চ থেকে, তা সবার কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার।
পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে খবর প্রকাশের পর অবশ্য আদালতের দুটি বেঞ্চই আগের আদেশ বাতিল করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য অনুযায়ী আসামির দীর্ঘ নামের অংশবিশেষ দিয়ে করা আবেদন সবাইকে বিভ্রান্ত করেছে। উল্লেখ্য, গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর র্যাব ও পুলিশের অভিযানে শামীম গ্রেপ্তার হন এবং তার বিরুদ্ধে জুয়া, মাদক, অস্ত্র ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হয়। সেই থেকে গত চার মাস অন্য আসামিদের সঙ্গে তিনিও জেলে আছেন। দেখা যাচ্ছে গত ৪ ও ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চে তার নাম এসএম গোলাম প্রদর্শন করে জামিন আবেদন করা হয় ও তা মঞ্জুর হয়। তবে তার বিরুদ্ধে দুদকের করা অস্ত্র আইন ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলা রয়েছে। ঘটনার প্রায় এক মাস পর তথ্যটি ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনা প্রমাণ করে আদালত, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনি দপ্তর অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস উপযুক্ত সতর্কতা ও দক্ষতার প্রমাণ রাখতে পারেনি। পেশাগত কাজে, বিশেষত বিচারিক কার্যক্রমে যুক্ত সব পক্ষের আরও অনেক বেশি সতর্কতা ও দক্ষতার প্রয়োজন। কিন্তু বারবার বিভিন্ন ঘটনায় দেখা যাচ্ছে এর ব্যত্যয় ঘটছে।
আমাদের সময়ের সোমবারের পত্রিকায় প্রথম পাতায়ই খবর রয়েছে, বিচারকের আদেশ জাল করে সম্প্রতি একজন ভয়ঙ্কর খুনি উচ্চ আদালত থেকে মুক্তি পেয়ে এখন লাপাত্তা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আইনজীবীদের সহকারী দুই মুহুরিকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের হয়েছে। কিন্তু কথা হলো বারবার আইনের ফাঁক গলে কিংবা সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি ও দুর্নীতির কারণে আইনের শাসন কেন ব্যাহত হবে? কেন ভয়ঙ্কর অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যাবে? ভয়ঙ্কর অপরাধীদের মুক্তি পাওয়া কিংবা চরম দ-াদেশপ্রাপ্ত আসামির মুক্তিপ্রাপ্তির ঘটনা মানুষকে বিচলিত করে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাও তাতে ব্যাহত হয়।
বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সুরক্ষা জরুরি বিষয়। এ দিক থেকে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন আদালত ও সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর এবং ব্যক্তির সততা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরও মনোযোগ দিতে হবে বলে আমরা মনে করি। আর এ কাজে প্রধান বিচারপতিকে দিতে হবে নেতৃত্ব।