ঝালকাঠির সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ১৭ জন নিহতের তথ্য জানা গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২৫ জন।
শনিবার (২২ জুলাই) সকাল সোয়া ১০টার দিকে গাবখান ধানসিড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ঝালকাঠি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসির উদ্দিন সরকার জানান, সকালে পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া থেকে বরিশালগামী বাসটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের কাছে পৌঁছলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের পুকুরে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ১৩ জন ও পরে ৪ জন নিহত হন।
নিহতের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে :
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পৌরসভার পান্না মিয়ার ছেলে তারেক (৪৫), একই এলাকার মুজাফফর আলীর ছেলে সালাম মোল্লা (৬০), মরহুম সালাম মোল্লার ছেলে শাহীন মোল্লা (২৫), পশারিবুনিয়া গ্রামের জালাল হাওলাদারের মেয়ে সুমাইয়া (৬), ভান্ডারিয়ার রিজার্ভ পুকুরপাড় এলাকার মরহুম লাল মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম (৬০), মরহুম লাল মিয়ার ছেলে আবুল কালাম হাওলাদার, উত্তর শিয়ালকাঠি এলাকার মরহুম ফজলুল হক মৃধার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৮০), ঝালকাঠির রাজাপুর থানার নিজামিয়া গ্রামের মরহুম মাওলানা নজরুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪৩) ও তার মেয়ে খুশবো আক্তার (১৭), রাজাপুর উপজেলার বলাইবাড়ি এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে নয়ন (১৬), কাঠালিয়া উপজেলার বাশবুনিয়া এলাকার তৈয়বুর রহমানের মেয়ে সালমা আক্তার মিতা (৪২), বরিশালের বাকেরগঞ্জে উপজেলার চর বোয়ালিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ (৮), মেহেন্দীগঞ্জ সদরের রিপনের স্ত্রী আইরিন আক্তার (২২), তার মেয়ে রিপামনি (২)
বাকি তিনজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত যাদের নাম জানা গেছে :
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার রাসেল মোল্লা, ফাতিমা, রাসেল, মনিরুজ্জামান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার আকাশ, ঝালকাঠির আল-আমিন, ঝালকাঠির কাঠালিয়ার আবুল বাশার, রিজিয়া, রিজিয়া, আরজু, নলছিটি মিফতা, আজিজুল, ঝালকাঠির রাজাপুরের মনোয়ারা, আলাউদ্দিন, সোহেল, আবুল কালাম, পটুয়াখালী বাউফলের রুকাইয়া, সিদ্দিকুর, ভোলার সুইটি, সাতক্ষীরার সোহাগ, নাঈমুল, বরিশালের সাব্বির।
এছাড়া দু’জনকে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, তাদের নাম-জানা যায়নি।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুন শিবলীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে।
দুর্ঘটনায় আহত যাত্রী রাসেল মোল্লা জানান, ৪০ আসনের বাসটি সকাল ৮.৪৫ মিনিটে ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালের উদ্দেশে ছাড়ে। পথে বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী ওঠানোর ফলে যাত্রী সংখ্যা হয় প্রায় ৭০ জন। বাসটির ছাদেও কয়েকজন যাত্রী ছিল। বাসটি দ্রুত গতিতে ঝালকাঠির ছত্রকান্দা ধানসিড়ি ইউনিয়ন পরিষদ অতিক্রম করার সময় চালক সুপারভাইজারের সাথে কথা বলছিল। তখন তিনি নিয়ন্ত্রণ হারালে বাসটি সড়কের বামদিকের পুকুরে পড়ে যায়।
ধানসিড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম মাসুম বলেন, ‘আমি পরিষদে লোকজন নিয়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ শব্দ শুনে বের হয়ে দেখি বাসটি পুকুরে পড়ে গেছে। পরিষদে যারা ছিল এবং আশপাশের লোকজন ছুটে এসে যেভাবে পারে লোকজনকে বাঁচানোর চেষ্টা করে।’
উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে আহত হওয়া স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফয়সাল রহমান বাবু বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় আমি পরিষদের সামনে ছিলাম। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস পৌঁছার আগেই আমরা স্থানীয় ৫০ থেকে ৬০ জন মিলে উদ্ধারকাজ শুরু করি। সড়ক মহাসড়কের পাশে পুকুর বা জলাশয় থাকার কারণে নিহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে। মহাসড়কের কাছে পুকুর খনন বন্ধ করা উচিত।’
ঝালকাঠি বাসমালিক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মু. নাসির উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত বাসের ড্রাইভার ও সুপারভাইজারের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। হেলপার আকাশকে (১৭) পাওয়া গেছে।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের স্যারের পক্ষ থেকে লাশ দাফন ও পরিবহনের জন্য এক লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। ১৭ জন নিহত হওয়ায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হবে।