বিদায় বাংলাদেশ বলে দেয়া যায়৷ অলৌকিক কিছু না ঘটলে শিরোপা স্বপ্ন বুকে চেপেই দেশে ফিরতে হচ্ছে টাইগারদের। যে অবস্থানে আছে এখন দল, সেখান থেকে বলাই যায়, এখানেই এশিয়া কাপ শেষ সাকিবদের। যেই প্রত্যাশা নিয়ে দেশ ছেড়েছিল দল, তার ছিটেফোঁটাও পূরণ হয়নি। যদিও ভারতের বিপক্ষে একটা ম্যাচ এখনো বাকি, তবে তা শুধুই আনুষ্ঠানিকতার।
টানা দুই হারে এশিয়া কাপ থেকে ছিঁটকে গেল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের পর এবার হার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দুই ম্যাচেই ব্যাট হাতে ব্যর্থ দল।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর)কলম্বোতে লঙ্কানদের ২৫৭ রানে আটকে দিয়েও জিততে পারেনি সাকিব বাহিনী। ৪৮.১ ওভারে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ২৩৬ রানে। হেরেছে ২১ রানের ব্যাবধানে।
২৫৮ রানের লক্ষ্য আধুনিক ক্রিকেটে সহজ মনে হলেও কলম্বোতে মোটেও সহজ নয়। ২৩১ যেখানে গড় রান, দ্বিতীয় ইনিংসে যা মোটে ১৯১। ফলে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই জিততে হতো টাইগারদের। তবে পারেনি বাংলাদেশ। তাওহীদ হৃদয় চেষ্টা করেছেন, তবে বাকিরা সবাই আসা-যাওয়াতেই ব্যস্ত ছিলেন। হৃদয়ের ব্যাটে আসে ৮২ রান।
শুরুটা অবশ্য আশাজাগানিয়া ছিল, পাওয়ার প্লেতে কোনো রান না হারিয়েই ৪৫ রান এসেছিল। নাইম শেখের যদিও জড়তা কাটেনি, তবে ভালোই ব্যাট করছিলেন মেহেদী মিরাজ। তবে ইনিংসটা বড় করা হয়নি তার, ফিরতে হয় ১১.১ ওভারে৷ ২৯ বলে ২৮ রান আসে তার ব্যাটে। ৫৫ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।
নাইম শেখ শেষ পর্যন্ত জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারেননি, ফিরেছেন মিরাজ ফেরার পরপরই। ৪৬ বলে ২১ রান করে ফেরেন শানাকার দ্বিতীয় শিকার হয়ে। ৬০ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলা দল তখন তাকিয়ে অধিনায়ক সাকিবের দিকে৷ তবে আশাহত করেছেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। পারেননি সময়ের চাহিদা মেটাতে। দলকে বিপদে ফেলে দ্রুত (৩) ফেরেন তিনিও।
সাকিবকে অনুসরণ করেন তিনে নামা লিটন দাসও। সময়টা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না এ ব্যাটারের। আজও যা কাটেনি, ২৪ বলে ১৫ করে বিদায় নেন তিনি। দল তখন বিপদে, ১৮.৬ ওভারে মাত্র ৮৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে।
সেখান থেকে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন মুশফিক ও তাওহীদ হৃদয়। জয়ের আশা মিটিমিটি জ্বালিয়ে রেখেছিলেন দু’জনে মিলে। ধীরে ধীরে দলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন লক্ষ্যের কাছে। তবে বেশিদূর আগানো গেলো না, আবারো বাধা হয়ে দাঁড়ালেন শানাকা। এবার মুশফিককে তুলে নিলেন তিনি। ৪৮ বলে ২৯ করে ফিরেন মুশফিক।
তবে এমন চাপের মাঝেও হেসে উঠে হৃদয়ের ব্যাট। আসরের প্রথম তিন ম্যাচে ম্লান থাকার পর ছন্দ ফিরে পান তিনি। জ্বলে উঠেন আপন শক্তিতে, তুলে নেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশতক। ছুঁটছিলেন শতকের দিকে, তবে থিকসানা আটকান তাকে, ফেরান ৯৭ বলে ৮২ রানে। সেখানেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশেরও জয়ের স্বপ্ন।
সাতে নামা শামিম পাটোয়ারী অবশ্য আগেই ফেরেন ১০ বলে ৫ করে। তবে নাসুম আর শরিফুল মিলে দলকে পাড় করান দুইশো রান। চেষ্টা করেছিলেন জেতাতেও, তবে তা পেরে উঠেননি। থামতে হয় ৪৮.১ ওভারে। শেষ উইকেট জুটিতে নাসুম হাসানকে নিয়ে যোগ করেন ১৩ বলে ২০ রান। লঙ্কানদের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন পাথিরানা, থিকসানা ও শানাকা।
এর আগে টসে জিতে বল করতে নেমে প্রথম ওভারেই লঙ্কানদের চমকে দেন তাসকিন আহমেদ। পাথুম নিশানকার বিপক্ষে এলবিডব্লুর আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। তবে ৩৫ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে শ্রীলঙ্কার। দিমুথ করুনারত্নে ফেরেন ১৭ বলে ১৮ রান করে। ষষ্ঠ এভারে হাসান মাহমুদের শিকার হন তিনি।
এরপর নিশানকা ও কুশল মেন্ডিস মিলে ধরেন হাল। দু’জনের জুটিতে আসে ১০৮ বলে ৭৪ রান। দলের রান পৌঁছায় তিন অঙ্কের ঘরে। তবে এরপরই বোলাররা চেপে ধরেন লঙ্কানদের। ১ উইকেটে ১০৮ রান থেকে পরের ৫৬ রান তুলতেই আরো ৪ উইকেট তুলে নেয় তাদের।
যেখানে বড় অবদান শরিফুলের। তার জোড়া আঘাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় বাংলাদেশ। পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট তুলে নেন তিনি। ফেরান থিতু হওয়া নিশানকা ও কুশল মেন্ডিস, উভয়কেই। প্রথমে পাথুম নিশানকাকে (৪০) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন, এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন তাকে৷
পরের ওভারে এসে সদ্য ফিফটি করা মেন্ডিসকে সাজঘরের পথ দেখান বাঁ-হাতি এই পেসার৷ আউট হবার আগে ৭৩ বলে ৫০ রান করেন মেন্ডিস। এরপর অল্প রানের ফিরেছেন আসালাঙ্কা ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। আসালাঙ্কা ১০ রান ও সিলভা করেন ৬ রান। ৩৭.১ ওভারে ১৬৪ রানে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
সেখান থেকে দলকে টানেন সামারাবিক্রমা। চাপের মুখে দারুণ ব্যাট করেন এই ব্যাটার। পশানাকে নিয়ে গড়েন ৫৮ বলে ৬০ রানের জুটি। ৪৭তম ওভারে হাসানের তৃতীয় শিকার হবার আগে শানাকা করেন ৩২ বলে ২৪ রান। তবে বিক্রমা খেলতে থাকেন বিক্রমের সাথেই। শেষ বলে এসে আউট হম ৭২ বলে ৯৩ রান করে।
৩টি করে উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ ও তাসকিন আহমেদ। জোড়া উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। উইকেট না পেলেও দারুণ বল করেন নাসুম আহমেদ। বলা যায় তার সৌজন্যেই চাপে থাকে লঙ্কানরা। ১০ ওভারে মোটে ৩১ রান দেন তিনি।