রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৩ অপরাহ্ন

কেমন আছেন কলকাতায় আটকে পড়া বাংলাদেশীরা!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০২০
  • ২৭৪ বার

শহর কলকাতার মধ্যে এ যেন একখণ্ড বাংলাদেশ। কোনো হোটেলের গায়ে লেখা, ‘বাংলাদেশের ঘরের খাবার’। কোনোটিতে বাঙালি খাবারের একাধিক ছবি-সহ লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের বাড়ির কথা মনে পড়বেই’! কয়েক পা এগিয়েই আবার বাংলাদেশে ফেরার একাধিক ভ্রমণ সংস্থার অফিস।

বছরভর এই সব নিয়েই ব্যস্ত থাকে ইএম বাইপাস লাগোয়া সোনালি পার্ক, শান্তি পার্কের মতো কয়েকটি এলাকা। কারণ, মূলত চিকিৎসা এবং তার পাশাপাশি নানা কাজে কলকাতায় আসা বাংলাদেশীরা ওঠেন এখানকারই একাধিক গেস্ট হাউসে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বাংলাদেশী তো দূর, স্থানীয় লোকও রাস্তায় নেই। সুনসান পাড়ায় কয়েক জনকে হেঁটে আসতে দেখে এক ভ্রমণ সংস্থার মালিক বললেন, ‘‘আপনারা আইতে পারলেন? বর্ডারে আটকায় নাই? করোনা হইতাসে তো!’’

যাদের উদ্দেশ্যে কথাগুলি বলা, তারা নিজেদের কলকাতার বাসিন্দা জানানোয় ওই মালিক বলেন, ‘‘সপ্তাহ দুয়েক ধরে মাছি তাড়াচ্ছি। সব গেস্ট হাউস প্রায় ফাঁকা। কলকাতা ছেড়ে চলে গিয়েছেন বাংলাদেশিরা। যে ক’জনকে বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে, তারাও আতঙ্কে বেরোচ্ছেন না।’’ কয়েক পা এগিয়েই সোনালি পার্কের একটি গেস্ট হাউস। অনেক ডাকাডাকির পরে দরজা খুললেন মালিক শুভাশিস মজুমদার। সেখানকার সব ঘর ফাঁকা পড়ে রয়েছে। কর্মব্যস্ততা নেই রান্নাঘর, খাবার জায়গায়। দুপুরে ঘুম ভাঙানোয় বিরক্ত শুভাশিসবাবু বললেন, ‘‘এক জন যিনি ছিলেন, কয়েক দিন আগেই চলে গিয়েছেন। তার পর থেকে আর কেউ আসেননি। কাজের জন্য এখানে একজন সব সময়ে থাকেন। প্রয়োজনে তাকে ডেকে নেয়া হবে জানিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলেছি।’’

কিছু দূরেই অন্য এক গেস্ট হাউসের মালিককে দেখা গেল সঙ্গীদের সঙ্গে খোশগল্পে ব্যস্ত। বাংলাদেশী একটি পরিবার থেকে যেতে বাধ্য হলেও অন্য কোনো বিদেশি দূর, এ দেশেরও কেউ সেখানে নেই বলে জানালেন তিনি। একটি কাগজ বার করে সেই মালিক বললেন, ‘‘প্রতিদিন থানা থেকে এসে বিদেশি আবাসিকদের রিপোর্ট নিয়ে যাচ্ছে। রিপোর্ট কী দেব! সবই ফাঁকা।’’ আটকে পড়া বাংলাদেশী পরিবারের সদস্য রাইফাত হুসেন নামে এক তরুণ বললেন, ‘‘বন্ধু-বান্ধব, পরিজনেরা মিলিয়ে এখানে আমরা আটজন আছি। আমার এক ভাই পরিবার নিয়ে অন্য জায়গায় উঠেছেন। কলকাতায় ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু করোনার জন্য সব জায়গা তো বন্ধই হয়ে গেছে। ফিরতেও শুনছি সমস্যা হচ্ছে। ভাই এলে ফেরার ব্যাপারে ঠিক করা হবে।’’

করোনা-আতঙ্কের মধ্যেও স্ত্রীয়ের চিকিৎসা নিয়েই অবশ্য বেশি চিন্তিত বাংলাদেশ ঝিনাইদহের বাসিন্দা শামিম আহমেদ। শান্তি পার্কের একটি গেস্ট হাউসে বসে তিনি জানান, স্ত্রীরোগের চিকিৎসা করাতে কলকাতায় এসেছিলেন তারা। ২৮ মার্চ পরবর্তী দিন দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভিড় এড়ানোর নির্দেশিকা দেয়া হয়েছে। শামিমের পাশে বসা স্ত্রী নার্গিস আখতার বললেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে ডাক্তার দেখানো কি যাবে?
আমাদের দেশ থেকেও করোনার খবর পাচ্ছি।’’ আবার বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসা না করিয়েই কলকাতা ছাড়ার জন্য মরিয়া ঢাকার গাজিপুর থেকে শান্তি পার্কের এক গেস্ট হাউসে ওঠা জাসমিনা আখতার। বললেন, ‘‘মা এ দেশে বসে রোগে পড়তে চাইছেন না। এমনিতেই মায়ের হৃদ্‌রোগের সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে বয়স্কদের শরীরে করোনা খুব বেশি প্রভাব ফেলছে শুনেছি। তাই ঠিক করেছিলাম, আর দেরি করব না। এখন কী হবে জানি না।’’

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com