শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন

কাঁচা হলুদের চা কেন খাবেন

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৮৩ বার

‘হলুদ বাটিছে হলুদ বরণী মেয়ে,

হলুদের পাটা হাসিয়া গড়ায় রাঙা অনুরাগে নেয়ে।

দুই হাতে ধরি কঠিন পুতারে ঘষিছে পাটার ’পরে,

কাচের চুড়ি যে রিনিক-ঝিনিকি নাচিছে খুশীর ভরে।‘

কবি জসীমউদ্‌দীনের কবিতায় বাটাবাটির সুন্দর বর্ণনা থাকলেও আজকাল আর কেউ হলুদ বাটতে চায় না। তবে হলুদ না বাটলেও হলুদ খাওয়া কিন্তু থেমে নেই। আমরা দুই রকম হলুদ ব্যবহার করি—‘পাকা’ আর কাঁচা। ‘পাকা’ হলুদ মানে খাওয়ার হলুদ। সেটা তো রান্নায় ব্যবহার করা হয়, কিন্তু কাঁচা হলুদ গায়ে মাখা ছাড়া আর কীভাবে ব্যবহার করা যায়? কাঁচা হলুদ কিন্তু চা বানিয়েও খেতে পারেন। কিন্তু কেন? কারণ, এর আছে অনেক উপকারিতা। কাঁচা হলুদে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি-৬, পটাশিয়াম, ফাইবার, ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন সি থাকে। আর থাকে কারকিউমিন, যা বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের বাঁচায়। আয়ুর্বেদশাস্ত্রমতে, হলুদ রক্ত শুদ্ধ করে। এবার জেনে নিই, কাঁচা হলুদের গুণাগুণ।

কাঁচা হলুদের গুণ

  • ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য কাঁচা হলুদ বিশেষ উপকারী। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
  • কাঁচা হলুদ আমাদের হজমশক্তি বাড়িয়ে দেয়। ফলে সহজেই খাবার পরিপাক হতে সাহায্য করে।
  • যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা হলুদে অনেক আয়রন থাকে। শরীরে আয়রনের স্বল্পতা দেখা দিলে এটি আয়রন বাড়াতেও সহায়তায় করে।
  • ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কারকিউমিন এলডিএল ও টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে। আর এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করা মানে হলো আমাদের শরীরে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমানো, যার সঙ্গে কমে স্ট্রোকের ঝুঁকিও।
  • হলুদ চা ক্যানসার প্রতিরোধে অবদান রাখতে পারে। কারকিউমিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট একটি কার্যকর অ্যান্টিকার্সিনোজেন পদার্থ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • আলসারেটিভ কোলাইটিস (ইউসি) একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা, যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের (জিআই ট্র্যাক্ট) নিচের অংশে আলসার সৃষ্টি করে। কাঁচা হলুদ এই রোগ দানা বাঁধতে বাধা দেয়। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টার বলছে, ইউসি রোগীরা হলুদ খেলে তাঁদের এই রোগ আবার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

কাঁচা হলুদ খাওয়ার আগে সাবধানতা

  • ব্যথা উপশমকারী ইন্ডোমেথাসিন, অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসিটামিনোফেনের প্রভাব কমাতে পারে হলুদের ক্যাপসুল (হলুদের সাপ্লিমেন্ট)।
  • কেউ যদি কেমোথেরাপি চিকিৎসা নিতে থাকেন, তাহলে কাঁচা হলুদের ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট গ্রহণ করার আগে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
  • যাঁরা ওয়ারফারিন গ্রহণ করছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হলুদ ক্যাপসুল রক্ত পাতলা করে ঝুঁকি বাড়াতে পারে (হলুদের সাপ্লিমেন্ট)।
  • ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ যাঁরা গ্রহণ করেন, তাঁরা যদি বেশি কারকিউমিন সেবন করেন, তবে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

কাঁচা হলুদ ভালো কেন

  • কাঁচা হলুদের সক্রিয় উপাদান হলো কারকিউমিন নামে একটি প্রাকৃতিক যৌগ (পলিফেনল), যার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি—দুটি বৈশিষ্ট্যই আছে। যা বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে খাদ্যনালিকে সুরক্ষিত রাখে।
  • অন্যান্য রঙিন উদ্ভিদভিত্তিক খাবারের মতো কাঁচা হলুদ ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট-সমৃদ্ধ, যা বিনা মূল্যে র‍্যাডিক্যাল-নিরপেক্ষ (যথা দূষণ, সূর্যালোক) এবং আমাদের কোষগুলোকে ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
  • এটা ক্যানসার ও হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
  • খাবারে কিছু কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে দেহের অভ্যন্তরের প্রদাহ দূর হয়।
  • বাতব্যথা ও জয়েন্টে ব্যথা, কোলাইটিস, অ্যালার্জি ও সংক্রমণের মতো প্রদাহ ভালো করতে পারে কাঁচা হলুদ।

কাঁচা হলুদ চা কীভাবে বানাবেন

আদার মতো হলুদের মূল দিয়ে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু চা তৈরি যায়। জনস হপকিনস মেডিসিনের একজন অনকোলজি বিশেষজ্ঞ, ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ও পুষ্টিবিদ, মেরি-ইভ ব্রাউন কাঁচা হলুদের প্রস্তুত প্রণালি দিয়েছেন এভাবে—

  • ২ টেবিল চামচ কাঁচা হলুদের কাটা মূল বা ২ চা-চামচ হলুদগুঁড়া।
  • ১-২ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন।
  • কম আঁচে ৫ মিনিট সেদ্ধ করুন। তারপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন। এরপর স্বাদ পরিবর্তন করতে লেবু ও মধু যোগ করুন। ব্যস, হয়ে গেল কাঁচা হলুদের চা। এই চা আপনি গরম ও ঠান্ডা—দুইভাবে খেতে পারেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com