রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন

লক্ষণ নিয়ে আত্মগোপনে, করোনার বিস্তার রোধে পরীক্ষা করা জরুরি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০২০
  • ৩৬৩ বার

ক’দিন আগেও দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) নির্ধারিত ফোন নম্বরে কল করে সিংহভাগ মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পায়নি।

কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। বর্তমানে ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সন্দেহভাজন সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনতে সারা দেশে ২৯টি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে সবগুলোর কাজ শুরু হবে। এখন ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিনটি ল্যাবে পরীক্ষা চলছে। প্রস্তুত আছে সাতটি ল্যাব। বাড়ানো হয়েছে কর্মী সক্ষমতাও।

পিসিআর টেস্টের জন্য ৯২ হাজার টেস্ট কিট্স সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০ হাজার ইতিমধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে। অথচ উদ্বেগের বিষয় হল, করোনাভাইরাসের লক্ষণ-উপসর্গ আছে পরীক্ষার জন্য এমন মানুষ খুঁজে পাচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। টেলিফোনে দেয়া ঠিকানা ও ফোন নম্বর ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়েও তাদের অধিকাংশের খোঁজ মিলছে না। অনেকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।

ফলে বিপুলসংখ্যক সন্দেহভাজন ব্যক্তি থেকে যাচ্ছেন করোনা পরীক্ষার বাইরে। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এসব ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে আরও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। বস্তুত এভাবেই রোগটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাই যারা করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসেন, তাদের প্রত্যেককেই পরীক্ষার আওতায় আনা প্রয়োজন।

ধারণা করা হচ্ছে, লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে অনেকেই আত্মগোপন করেছেন। অথচ সন্দেহভাজনের উচিত তাদের নিজেদের জন্য, পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য এবং আশপাশের মানুষের ভালোর জন্য স্বেচ্ছায় পরীক্ষা করানো। প্রয়োজনে কোয়ারেন্টিনে যাওয়া। এতে ভয়ের কিছু নেই। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘নিজের সুরক্ষা নিজেকে নিতে হবে। কেউ এটা দিয়ে যাবে না। নিজের ভালোটা নিজেকেই বুঝতে হবে। এটা কেউ না বুঝলে তার নিজেরই ক্ষতি হবে, প্রতিবেশীর ক্ষতি হবে।’

বস্তুত করোনার বিস্তার ঠেকানোর প্রধান উপায় হল করোনা সংক্রমিত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা। এজন্য সন্দেহভাজন সব মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনা জরুরি। চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ যে দেশগুলো সাফল্যের সঙ্গে করোনা মোকাবেলা করছে, তারা প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের করোনা পরীক্ষা করে আসছে, বারবার পরীক্ষা করছে। আমাদের এতদিন সেই সুযোগ ছিল না।

আশার কথা, এখন সে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠছি আমরা। এমনকি দেশেরই একটি প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে একটি কিট উদ্ভাবন করেছে। এটি তৈরির কাঁচামাল আমদানির অনুমোদনও দিয়েছে সরকার। এসব কাঁচামাল দেশে চলে এলে ব্যাপক ভিত্তিতে করোনা পরীক্ষার সুযোগ তৈরি হবে নিশ্চয়ই।

কিন্তু মানুষ যদি করোনার লক্ষণ নিয়ে আত্মগোপনে থাকে, তাহলে সফলভাবে এ দুর্যোগ মোকাবেলা কীভাবে সম্ভব হবে সেটাই প্রশ্ন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেছেন, এতদিন যারা বিদেশ থেকে দেশে প্রবেশ করেছেন, ফোনে যোগাযোগ করেছেন, পরীক্ষায় তাদের সহযোগিতা না পেলে দৈবচয়নের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে। এটি করা কতটুকু সম্ভব হবে আমরা জানি না। তবে দেশে করোনা যাতে মহামারীর রূপ পরিগ্রহ না করে সে জন্য প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা। এ ব্যাপারে যারা নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করবেন, তারা শুধু নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের জনগণ। এ বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে সবাইকে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com