বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কোনো পর্যবেক্ষক টিম পাঠায়নি বলে সোমবার (৮ জানুয়ারি) ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।
পর্যবেক্ষকদের নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র ভয়েস অফ আমেরিকাকে ইমেইলে জানান, ‘বাংলাদেশে ২০২৪ সালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কোনো পর্যবেক্ষক টিম পাঠায়নি। যে ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে পর্যবেক্ষক হিসেবে কথা বলেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোনো প্রতিনিধি নন এবং বেসরকারি নাগরিক হিসেবেই তারা কাজ করেছেন। তাদের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করে না।’
বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের হার নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনে কত ভোটার ভোট দিয়েছে তা নির্ধারণ করার মতো অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র না থাকলেও এ নির্বাচনে অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় যে কম সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছে বলে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো যে রিপোর্ট করেছে তা যুক্তরাষ্ট্রের চোখে পড়েছে। অনেক ভোটারই যে এ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন সে ব্যাপারটিও যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে।’
এর আগে স্থানীয় (বাংলাদেশের) গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, রোববারের নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখেন বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পর্যবেক্ষকেরা। পরে সেদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন কয়েকজন। ওই সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সাবেক সদস্য জিম বেটস, আমেরিকান গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিসের প্রধান নির্বাহী আলেক্সান্ডার গ্রে, কানাডার পার্লামেন্ট সদস্য চন্দ্রকান্ত আর্য, সিনেটর ভিক্টর ওহ ও আরো কয়েকজন।
ইউএনবি বার্তা সংস্থা রিপোর্ট করেছে, ওই সংবাদ সম্মেলনে তারা ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরাপদ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ‘অবাধ বা নিরপেক্ষ হয়নি’
অন্যান্য পর্যবেক্ষকের মতো যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, জানুয়ারির ৭ তারিখে হওয়া বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়নি, বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।সেইসাথে সবগুলো দল এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় যুক্তরাষ্ট্র হতাশা প্রকাশ করেছে।
সোমবার ৮ জানুয়ারি দেয়া এক বিবৃতিতে মিলার বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ও তাদের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা, সমাবেশ করার স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানায়।’ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়েছে উল্লেখ করে মিলার বলেন, ‘এই নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের হাজার হাজার সদস্যকে গ্রেফতার করা ও নির্বাচনের দিন ঘটা অনিয়মের রিপোর্টগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ জারি থাকবে।’
নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের আগের কয়েক মাসে ঘটা সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ম্যাথিউ মিলার বিবৃতিতে বলেন, ‘সহিংসতার এ ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করা ও এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করছি। সেই সাথে সব রাজনৈতিক দলকে সহিংসতা পরিহার করার জন্যও আমরা আহ্বান জানাই।’
মিলার আরো বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ ভিশন বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে, যার মধ্যে রয়েছে একটি অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক, বাংলাদেশের মানবাধিকার ও সুশীল সমাজের প্রতি সমর্থন ও দু’ দেশের নাগরিকদের সাথে নাগরিকদের ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে গভীর করা।’
সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা