শীতকালে ওয়াশরুমে গিয়ে স্ট্রোক হয়েছেন-এমন খবর প্রায়ই শোনা যায়, বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে এমনটি হয়ে থাকে। শীতকালে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কারণ শীতকালে সকালে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করা বা হঠাৎ ঝরনা ছেড়ে দেওয়া। তাই শীতকালে এ ব্যাপারে সাবধান থাকা জরুরি।
স্টোকের লক্ষণ : শরীরের কোনো একদিকে দুর্বল বোধ করা বা শরীরের কোনো একদিক নাড়াতে না পারা, হাত-পায়ে অবশ ভাব, মুখ একদিকে বেঁকে যাওয়া, প্রচ- মাথাব্যথা হওয়া, কথা অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া, বমি হওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, মুখের অসাড়তা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, বেসামাল হাঁটাচলা, হঠাৎ খিঁচুনি বা ধপ করে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলে বুঝতে হবে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যা করতে হবে : এমন হলে রোগীকে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। এ অবস্থায় কোনো খাবার বা ওষুধ মুখে দেওয়া যাবে না। কারণ এগুলো শ্বাসনালিতে ঢুকে আটকে যেতে পারে। বরং মুখে জমে থাকা লালা ও বমি পরিষ্কার করে দিতে হবে। আঁটোসাঁটো জামাকাপড় ঢিলে করে দিতে হবে। দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময় অবশ্যই রোগীর আগের চিকিৎসার ফাইল সঙ্গে নিয়ে যেত হবে।
স্ট্রোক-পরবর্তী করণীয় : রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর আধাঘণ্টার মধ্যে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে। ইমারজেন্সি ব্রেইনের রেডিওলোজিক টেস্ট, সিটিস্ক্যান, এমআরআই করতে হবে। ঘাড়ের রক্তনালির ডপলার, হার্টের সমস্যার জন্য ইকো পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা পরীক্ষা করে নিতে হবে। প্রয়োজনে এনজিওগ্রাম ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষাও করতে হবে।
চিকিৎসা করাতে হবে দ্রুত : স্ট্রোক হলে আক্রান্ত এলাকার মস্তিষ্ক কোষের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রক্ত সরবরাহ দুই থেকে পাঁচ মিনিটের বেশি বন্ধ থাকলে স্নায়ুকোষ স্থায়ীভাবে ধ্বংস হয়।
স্ট্রোকের চিকিৎসা : স্ট্রোক ব্রেইনের রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার জন্য এবং ব্রেইন কম রক্তপ্রবাহ নিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারে না। তাই স্ট্রোকের চিকিৎসা তাৎক্ষণিক শুরু করতে হয়। ওষুধ প্রয়োগ করে রক্তের চাপ, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে। রক্তের জমাট অবস্থা কাটিয়ে উঠতে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু করতে হবে। প্রাথমিক ধাপ কাটিয়ে ওঠার পর বহুদিন পর্যন্ত ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। স্ট্রোক হয়েছে বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিরোধ : নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা, ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা, ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন, নিয়ম করে হাঁটা, খাদ্যাভ্যাসে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, মানসিক চাপ পরিহার করা, ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে। তবে সচেতন ও সাবধানতা জরুরি।
লেখক : অধ্যাপক; ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সস ও হাসপাতাল চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি.