লঙ্কা-বাংলা লড়াই বরাবরই উত্তেজনা ছড়ায়। সাধারণ একটা ম্যাচও অসাধারণ হয়ে উঠে, ছড়ায় আগুনের উত্তাপ। সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে চট্টগ্রামে সিরিজ নির্ধারণী শেষ ওয়ানডে। সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডে ১-১ সমতায় থাকায় শেষ ম্যাচটা পরিণত হয়েছে অলিখিত ফাইনালে।
আজ সোমবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচের ভেন্যু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই খেলবে দুই দল। তবে প্রথম দুই ম্যাচের মতো বেলা আড়াইটায় নয়, সিরিজ নির্ধারণী এই ম্যাচ মাঠে গড়াবে সকাল ১০টায়।
বাঘে-সিংহের লড়াই বলতে যা হয়, তাই যেন দেখা মেলে দুই দলের দেখাতে। নিদাহাস ট্রফি দিয়ে যার শুরু, এরপর নানা ঘটনায় সময়ে সময়ে বেড়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁঝ। সর্বশেষ উদাহরণ বিশ্বকাপের টাইম আউট বিতর্ক। চলতি সিরিজেও আছে যার রেশ। ফলে দুই দলের দ্বৈরথ এখন আর জয় পরাজয়ে আটকে নেই, রূপ নিয়েছে সম্মানের লড়াইয়ে।
সপ্তাহ খানেক আগে ঘরের মাঠে এই শ্রীলঙ্কার কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারে বাংলাদেশ। ভালো খেলেও সেই সিরিজ জিততে না পারার আক্ষেপ রয়েছে টাইগারদের। আজ ওয়ানডে সিরিজটা জিতে সেই দুঃখ ঘুচাতে চায় স্বাগতিকেরা। নিতে চায় মধুর প্রতিশোধ।
তবে তা খুব একটা সহজ হবে না। লঙ্কানরাও যে মান হারাতে চায় না। প্রথম ওয়ানডেতে হেরেও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাদের ঘুরে দাঁড়ানো সেই কথাই বলে। অর্থাৎ লড়াইটা হতে যাচ্ছে সেয়ানে সেয়ানে। যেন কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।
রানপ্রসবা সাগরিকায় অবশ্য বড় দায়িত্বটা নিতে হবে ব্যাটারদেরই। আগে ব্যাট করলে পুঁজি গড়তে হবে পাহাড় সমান, পরে ব্যাট করলে থাকতে হবে বড় রান তাড়া করার সাহসিকতা। যেখানে বড় ভূমিকা রাখতে হবে টপ অর্ডারকে, যা নিয়ে একটু ভাবতে হচ্ছে টাইগারদের। শিরোপা নির্ধারণী এই ম্যাচে নতুন দেখা যাবে উদ্বোধনী জুটি।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে বাজে করায় এই ম্যাচের দল থেকে বাদ পড়েন লিটন দাস। ফলে নিয়মিত ওপেনারের বদলে এনামুল হক বিজয় বা তানজিদ তামিমের দারস্থ হবে ম্যানেজমেন্ট। যেখানে অভিজ্ঞতা আর কম্বিনেশনের কারণে খানিকটা হলেও বিজয় এগিয়ে থাকবেন। তবে সৌম্য সরকারের সাথে ওপেন কে করবেন, এই প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হবে বল হাতে কেমন করে বাংলাদেশ, তার ওপর ভিত্তি করে। যেখানে তাসকিন আহমেদ আর শরিফুল ইসলাম বড় ভরসার জায়গা। তবে চিন্তা করতে হচ্ছে তানজিম সাকিব না থাকায়। তার বদলে মোস্তাফিজুর রহমান বা হাসান মাহমুদের মাঝে দু’জনের কেউ একজন একাদশে থাকবে।
তাইজুলের জায়গায় দেখা যেতে পারে রিশাদকে হোসেনকে। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে তাকে না খেলানোর প্রায়শ্চিত্ত করতে পারেন হাথুরুসিংহে। চট্টগ্রামের মাঠে রিশাদ ভালো করার সম্ভাবনা আছে। বিপিএলেও যার নজির দেখা গেছে।
এদিকে শ্রীলঙ্কা খানিকটা চাপে আছে পেস আক্রমণ নিয়ে। দলের নিয়মিত মুখ দিলশান মাদুশঙ্কা চোটে পড়েছেন। তৃতীয় ওয়ানডেতে তাই খেলা হচ্ছে না ছন্দে থাকা এই পেসারের। এদিকে দলে বাড়তি কোনো পেসার না থাকায় হয়তো স্পিনার না হয় অলরাউন্ডারের শরণাপন্ন হতে হবে তাদের।
যদিও ম্যাচ উইনারে ভরপুর তাদের দল। যেকোনো সময় যে কেউ একাই ঘুরিয়ে দিতে পারেন ম্যাচের মোড়। টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর ওয়ানডেতেও যার নজির দেখা গেছে। সব মিলিয়ে নামে-ভারে, শক্তিমত্তা আর সাম্প্রতিক ছন্দ, উভয়েই দুই দল পাল্লা দিচ্ছে সমানে সমানে। ফলে উত্তেজনায় একটা ম্যাচ দেখার অপেক্ষায় সমর্থকেরা।
শেষ ওয়ানডেতে যেমন হতে পারে বাংলাদেশ একাদশ
এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, রিশাদ হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।