সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুসের মামলার শুনানিতে যারা জুরি (বিচারকাজে আদালতের সহায়তায় বিচারক হিসেবে সম্পৃক্ত নাগরিক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের জন্য নির্ধারিত কিছু প্রশ্ন প্রকাশ করা হয়েছে।
‘এই সম্ভাব্য বিচারকরা পডকাস্ট শোনেন কিনা’ থেকে শুরু করে ‘একজন সাবেক রাষ্ট্রপতিকে রাষ্ট্রীয় আদালতে ফৌজদারিভাবে বিচার করার বিষয়ে তাদের অনুভূতি’ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় প্রশ্নের মধ্যে স্থান পেয়েছে।
অন্যদিকে, সোমবার একটি আপিল আদালত মামলাটিকে বিলম্বিত করতে ট্রাম্পের সর্বশেষ প্রচেষ্টা খারিজ করে দিয়েছে। ম্যানহাটনের সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধেই মামলা করেছিলেন তিনি।
ওইদিনই নিউইয়র্কের এক আদালতের আদেশে সম্ভাব্য বিচারকদের জন্য প্রশ্ন প্রকাশ করা হয়। জুরি নির্বাচন শুরু হবে ১৫ এপ্রিল থেকে।
আদালতের আদেশে জুরির জন্য তালিকাবদ্ধদের নিজেদের সম্পর্কে জানাতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে ট্রাম্পের বিরোধিতা বা সমর্থন করে এমন কোনো দল বা গোষ্ঠীতে তাদের অংশগ্রহণ আছে কিনা।
সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকটি গোষ্ঠীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো কিউঅ্যানন মুভমেন্ট, দ্য প্রাউড বয়েজ, দ্য ওথকিপারস, দ্য থ্রি পার্সেন্টারস, দ্য বুগালু বয়েজ এবং অ্যান্টিফা।
অন্যান্য প্রশ্নে বলা হয়েছে :
তারা কোন গণমাধ্যম দেখেন, পড়েন এবং কোন সামাজিক যোগাাযোগমাধ্যম অনুসরণ করেন, জিজ্ঞেস করা হবে সে ব্যাপারেও।
গত বছর, প্রাপ্তবয়স্কদের চলচ্চিত্র অভিনেত্রী স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সাথে কথিত সম্পর্কের ব্যাপারে মুখ বন্ধ রাখতে অর্থ প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে।
তিনি অবশ্য ব্যবসায়িক তথ্য জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করে আসছেন, এই মামলাসহ সকল আইনি তৎপরতা তার ওপর রাজনৈতিক নিপীড়নেরই ফল।
২০২৪ সালের জন্য রিপাবলিকানদের হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, মামলাটি ম্যানহাটনে করা হয়েছে কারণ সেখানে বিপুল সংখ্যক ডেমোক্র্যাটিক ভোটার রয়েছেন।
তার দীর্ঘদিনের আবাসস্থল এই দ্বীপটিতে নিরপেক্ষ কোনো জুরি পাবেন না, এমন অভিযোগও তুলছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিচারের জুরি নির্বাচন ট্রাম্পের আইনি দলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে।
সাবেক ব্রুকলিন প্রসিকিউটর জুলি রেন্ডেলম্যান বলেন, ‘এটি অসম্ভব নয়, তবে এটি কঠিন নিঃসন্দেহে।’
রিপাবলিকান প্রার্থীর বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি মামলা চলছে। তবে নভেম্বরে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে একমাত্র এই ঘুসের মামলাটিরই বিচারকাজ সঙ্ঘটিত হতে পারে।
বিচার বিলম্বিত করার আপাত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ট্রাম্প সোমবার নিউইয়র্কের বিচারপতি হুয়ান মার্চানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। আপিল আদালত কয়েক ঘণ্টার মাথায় সেই শেষ সময়ের চেষ্টাটিকে খারিজ করে দেয়।
মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজ জানাচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প চেয়েছিলেন বিচারের স্থান পরিবর্তন করতে। মামলার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রকাশ্যে মন্তব্য করার ক্ষমতাকে সীমিত করে এমন একটি ‘গ্যাগ অর্ডার’ও খারিজ করতে চাইছিলেন তিনি।
মামলাটির ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি এবং এটি পর্যালোচনা করাও সম্ভব হয়নি।
যদিও সিবিএস বলছে, একটি আদালতের অনলাইন ডেটাবেসে ‘ভেন্যু পরিবর্তন
’ এবং ‘স্টে (স্থিতাবস্থা)’ শিরোনামসহ দু’টি আইনি দলিল দেখা গেছে।
মন্তব্যের জন্য ট্রাম্পের আইনি দলের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।
সরকারি কৌসুলিদের কাছ থেকে মামলার কিছু নথি অপ্রত্যাশিতভাবে প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল। আইনজীবীদেরও সেসব পর্যালোচনা করার জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যার কারণে যে বিচারপ্রক্রিয়া মার্চের শেষ নাগাদ চালু হওয়ার কথা ইতোমধ্যেই তা বিলম্বিত হয়ে ১৫ এপ্রিলে এসে ঠেকেছে।
সাবেক প্রেসিডেন্টের আইনজীবীরা বিচারকে আরো পিছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন।
এর মধ্যে বিচারপতি মার্চানের গ্যাগ অর্ডার বা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প।
মার্চান প্রাথমিকভাবে সাক্ষী, বিচারক এবং মামলার সাথে যুক্ত অন্যদের সম্পর্কে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা থেকে ট্রাম্পকে বিরত রাখতে আদেশটি জারি করেন।
কিন্তু সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ট্রাম্প এক বিচারকের মেয়েকে আক্রমণ করে কথা বলার পর ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ মামলায় সংশ্লিষ্টদের পরিবারের ক্ষেত্রেও এই আদেশটির আওতা বাড়াতে আবেদন করেন।
মার্চান গ্যাগ অর্ডারের রায়ে লেখেন, ‘মামলার জন্য নির্ধারিত বিচারক এবং অ্যাটর্নিদের পরিবারের সদস্যদের আক্রমণ করার কোনো আইনগত অধিকার তার নেই।’
সূত্র : বিবিসি