সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন

ঢাবির সব হলের নিয়ন্ত্রণ শিক্ষার্থীদের হাতে, হল ছাড়লো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪
  • ৪২ বার

গতকাল দিনভর পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে অধিকাংশই কোটাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সাধারণ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ক্ষুব্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল রাতভর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে।

শিক্ষার্থীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে একের পর এক হলে নিয়ন্ত্রণ হারায় ক্ষমতাসিন দলের ছাত্রসংগঠনটি। একে একে হল থেকে বেরিয়ে যান প্রতিটি হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলে শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতাদের রুমেও হামলা ও ভাঙচুর চালায়।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের পরই বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের তিনটি আবাসিক হল -অমর একুশে হল,শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক হলের নিয়ন্ত্রণ নেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেদিন থেকেই এই তিন হলে ছাত্রলীগের আর কোনো শীর্ষ নেতা প্রবেশ করতে পারেননি।

গতকাল রাতে রোকেয়া হলে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর কক্ষ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় তোপের মুখে হল ছাত্রলীগ সভাপতি সহ সংগঠনটির ১০ নেতাকর্মী হল থেকে বেরিয়ে যান। এরপর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রোকেয়া হলকে রাজনীতি মুক্ত বলে বিজ্ঞপ্তি দেন হলের প্রভোষ্ট নিলুফার পারভিন। এর পর কুয়েত মৈত্রী হলেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হলছাড়া করার ঘটনা ঘটে।

এরপর মধ্যরাতে লাঠিসোটা নিয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীরা বের হয়ে হলের নিয়ন্ত্রণ নেন। এ সময় হল ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতারা হল ত্যাগ করেন।

হলগেট বন্ধ করে স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ এসে চেষ্টা করেও শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে সরাতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এ হলের প্রভোস্ট জহুরুল হক হলকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করেন। 

ভোর ৫টার পর হলের মূলগেটের সামনে পরপর কয়েকটি  ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বাইকে করে এসে ককটেল ছুড়েন। এতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন হলে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা। পরে তারা একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ব্লকে থাকা ছাত্রলীগ নেতাদের অন্তত ২০টি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করেন।

এদিকে মধ্যরাত থেকে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে হাজি মুহাম্মদ মহসিন হল, বঙ্গবন্ধু হল, জসিম উদ্দিন হল, বিজয় একাত্তর হলেও নিয়ন্ত্রণ হারায় ছাত্রলীগ। বিপদ বুঝতে পেরে এসব হল থেকে আগেই নেমে গিয়েছিলেন অধিকাংশ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। পরে শিক্ষার্থীদের জড়ো হওয়ার সময় নেমে যান বাকিরাও।

হলগুলো নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর কোটা ও ছাত্রলীগ বিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। তাদের প্রত্যাশা, হলগুলো আর কখনো ক্ষমতাসিন ছাত্রলীগের দখলে যাবে না। বন্ধ হবে সব ধরনের গেস্টরুম ও গণরুম কালচার। প্রশাসনিক পূর্ন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে প্রতিটি হলে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চাপে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। হলছাড়া অনেক নেতাকর্মী এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। ক্যাম্পাসে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একছত্র আধিপত্য থাকা ছাত্রলীগকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে সেটি চিন্তাই করতে পারছেন না সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

এদিকে আজ দুপুর দুইটায় শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে গায়েবানা জানাজা ও বিক্ষোভ মিছিল ডেকেছে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ’। ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সম্ভাব্য অবনতির আশঙ্কায় প্রতিটি মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেক পোস্ট।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিচয় নিশ্চিত হওয়া ছাড়া আছে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না কাউকেই।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com