সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

দোকানপাট খুললেও বেচাবিক্রি তলানিতে

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪
  • ৫০ বার

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ও কারফিউয়ের প্রভাবে স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে রাজধানীর দোকানপাট ও বিপণিবিতানগুলো। কারফিউ জারি হওয়ার প্রথম চার দিন বন্ধ থাকার পর গত বুধবার থেকে এগুলো আবার খুলতে শুরু করেছে। কিন্তু ব্যবসায় এখনো স্বাভাবিক গতি ফেরেনি। বিক্রেতারা পণ্যের পসরা সাজিয়ে অপেক্ষায় থাকলেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। বেচাবিক্রি তলানিতে ঠেকেছে। বাণিজ্যের এমন মন্দাভাবে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ বাড়ছে। ব্যবসায় স্বাভাবিক দিন কবে ফিরবে সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার ইদ্রিস মার্কেটের কাপড়ের ব্যবসায়ী মো. সাগর দেওয়ান। স্বাভাবিক সময়ে সপ্তাহের ছয় দিন কাপড়, বিশেষ করে লুঙ্গি বিক্রি করে তার বেশ ভালোই আয় হয় বলে জানান এ ব্যবসায়ী। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা ও আয়-রোজগার এলোমেলো হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন দিনে পাঁচটি লুঙ্গিও বিক্রি হচ্ছে না। মার্কেটে ক্রেতাই নেই। কারফিউ শিথিল হওয়ায় এ এলাকার ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলেছেন। কিন্তু বেচাবিক্রি তেমন নেই।

নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরাও জানান হতাশার কথা। এ এলাকার নিউমার্কেট, নিউ সুপার, নূরজাহান, ধানমন্ডি হকার্স, গাউসিয়া, নিউমার্কেট ও চন্দ্রিমা মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, সকালের দিকে ব্যবসায়ীরা ঢিলেঢালা আমেজে দোকানপাট খুললেও ক্রেতা সমাগম তেমন দেখা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা জানান, ক্রেতা কম- তাই সকাল সকাল দোকান খোলার তাড়া অনুভব করছেন না বেশির ভাগ ব্যবসায়ী। অনেকে আবার দোকানই খুলছেন না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ সেরে ক্রেতার অভাবে পুরোটা সময় অলস কাটছে তাদের। ব্যবসায়ীদের দাবি, স্বাভাবিকের তুলনায় বর্তমানে ব্যবসা ৯০ শতাংশ কম হচ্ছে।

নিউ সুপার মার্কেটের পোশাক বিক্রেতা টিএস ফ্যাশনের মো. সোহেল বলেন, ১০ দিনের ওপর হলো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। বুধবার থেকে দোকান খুলেছি। কিন্তু ক্রেতারা এখনো মার্কেটমুখী হননি। বিক্রি নেই বললেই চলে। স্বাভাবিকের তুলনায় ১০ শতাংশ ব্যবসাও হচ্ছে না। ব্যবসা চলুক বা না চলুক আমাদের খরচ রয়েছে। কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে। কীভাবে দেবÑ সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসার পরিস্থিতি এমন হলে মাসের হিসাব এলোমেলো হয়ে যায়। ব্যবসায় স্বাভাবিক দিন আবার কবে ফিরবে- এখন সেই দিন গুনছেন সবাই।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা, এরপর কারফিউ। দুই সপ্তাহের ওপর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা বেচাবিক্রির মুখ দেখছেন না। বাণিজ্য কমে যাওয়ায় খারাপ সময় পার করছেন তারা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১৫ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর গত ১৯ জুলাই থেকে কারফিউ শুরু হয়। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। কারফিউ শিথিল হলে বর্তমানে সবকিছু আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। দোকানপাট ও বিপণিবিতানগুলোও খুলেছে। কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও মার্কেট এলাকাগুলোতে ক্রেতা সমাগম খুবই নগণ্য। পোশাক, জুতা, অলঙ্কার ও প্রসাধনীসহ অন্যান্য পণ্যের দোকানে বেচাবিক্রি একেবারেই কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সিটি করপোরেশন মার্কেট ফেডারেশনের সহসভাপতি ও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মনজুর আহমেদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কেট ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ৯০ শতাংশ কমে গেছে। এতে দোকান খরচই উঠছে না। ব্যবসার যে পরিস্থিতি, তাতে এ মাসে অনেকের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতেও কষ্ট হবে। ব্যবসায়ীরা সবাই চান দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক।

এদিকে এখনো ব্যবসায় ফিরতে পারেননি রাজধানীর বেশির ভাগ ফুটপাত ব্যবসায়ী। মৌচাক মার্কেট এলাকার ফুটপাতের টি-শার্ট বিক্রেতা মো. আবুল হাছান বলেন, এখনো দোকান নিয়ে বসতে পারছি না। আমরা দিন এনে দিন খাই। কতগুলো দিন ব্যবসা বন্ধ। এখন সংসার চালানোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কবে সবকিছু স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতি কারোরই কাম্য নয়। এতে দেশের ও অর্থনীতি সবার ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ফুটপাত ব্যবসায়ী- তারা অনেক কষ্টে আছেন। আমরা চাই দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক। দেশের অর্থনীতির চাকা পুরোদমে সচল হোক।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com