রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

সালমান-আনিসুলের শুনানি ঘিরে আদালতে যা ঘটল

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৪
  • ২৮ বার

রাজধানীর নিউমার্কেটের দোকানি শাহজাহান আলী (২৪) হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে ১০ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ শুনানি শেষে এ রিমান্ড আদেশ দেন। তবে শুনানিকালে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। নিউমার্কেট থানা পুলিশের উপপরিদর্শক সজিব মিয়া আসামিদের ১০ দিন করেই রিমান্ড আবেদন করেছিলেন।

এর আগে আজ সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে ওই দুই আসামিকে ব্যাপক নিরাপত্তায় ডিবি কার্যালয় থেকে আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। ডিবির মাইক্রোবাসে তাদের আদালত প্রাঙ্গণে আনার সময় বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা গাড়িতে ডিম নিক্ষেপ করেন। এ সময় তারা ‘ফাঁসি চাই’, ‘ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

হাজতখানা থেকে আসামিদের সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটের দিকে সিএমএম আদালতের দ্বিতীয় তলার ২৮ নম্বর এজলাসে ওঠায় পুলিশ। এ সময় বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের উপস্থিতিতে আদালতের কক্ষ ভরে যায়। আসামিদের এজলাসে ওঠানোর নিরাপত্তার জন্য আজ দুপুর থেকে আদালত প্রাঙ্গণে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

এজলাস কক্ষে যা ঘটল

আসামিদের এজলাসে ওঠানোর আগে বিকেলের দিকে কয়েকজন জুনিয়র আইনজীবী এজলাস কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষুব্ধ মনোভাব দেখে তারা এজলাস ছেড়ে চলে যান। তবে আসামিদের এজলাসে ওঠানোর কিছু সময় আগে ফারুক আহমেদ নামের একজন আইনজীবী আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য উপস্থিত হলে তাকে অন্য আইনজীবীরা মারধর করেন। পরে তিনি সেখান থেকে চলে যান।

আসামিদের এজলাসে ওঠানোর পর বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের থেকে বাঁচাতে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। আসামিদের এজলাসে সরাসরি লোহার খাঁচার মধ্যে ঢোকানো হয়। তখন উভয় আসামির পরনে পাঞ্জাবি ছিল। তাদের মুখে ছিল ছোট ছোট দাড়ি। নিরাপত্তার জন্য মাথায় হেলমেট ও পরনে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল। আসামিদের লোহার খাঁচায় ঢোকানোর পর আদালত কক্ষে হৈ চৈ শুরু হয়। আইনজীবীরা তাদের খুনি খুনি বলে শ্লোগাণ দেন। তবে আসামিদের এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না।

হট্টগোলের মধ্যেই এজলাসে ওঠেন বিচারক মামুনুর রশিদ। তখন প্রসিকিউশন পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন অনুয়ায়ী আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে শুনানি করেন। শুনানিকালে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। আইনজীবী না থাকার বিষয়ে বিচারক আসামিদের এ বিষয়ে কোনো কিছু জিজ্ঞেসও করেননি।

পুলিশের আবেদন অনুযায়ী আদালত ১০ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। বিচারক রিমান্ড আদেশ দিয়ে নেমে যাওয়ার পর পুলিশ এসলাসে উপস্থিত সব আইনজীবীকে বের করে দিয়ে আসামিদের হাজতখানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে সোয়া ৭টার দিকে আসামিদের নিয়ে যাওয়া হয়।

ইমাম হোসেনের বক্তব্য

শুনানিকালে এ মামলার বাদী আয়েশা বেগমের স্বামী ইমাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন। আসামিদের এজলাসে ওঠানোর পর তিনি আসামিদের উদ্দেশে ‘খুনি খুনি’, ‘ফাঁসি চাই’, ‘ফাঁসি চাই’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।

ইমাম হোসেন বলেন, ‘ওনাদের ফাঁসি চাই, আমার ছেলের লাশও দেখতে দেয় নাই। এজাহারে হত্যাকারী সম্পর্কে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা তারা জানেন না।’

মামলা করতে গেলে নিউমার্কেট থানা পুলিশ স্ত্রী আয়েশা বেগমের স্বাক্ষর রেখে চলে যেতে বলেন বলে অভিযোগ করেন ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘যারা গুলির আদেশ দিয়েছিলেন, তারাই খুনি। এ আসামিরাই খুনি।’

মামলার অভিযোগে যা আছে

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার বিক্রমপুর গ্রামের আয়েশা বেগম মামলার অভিযোগে বলেন, ‘আমার ছেলে শাহজাহান আলী (২৪) নিউমার্কেট থানার মিরপুর রোডস্থ বলাকা সিনেমা হলের গলির মুখে পাপসের দোকানে কাজ করত। প্রতি দিনের ন্যায় ১৬ জুলাই সকাল আনুমানিক ৯টার ঘটিকার সময় আমার ছেলে তার দোকানে কাজ করার জন্য আসে। ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় অজ্ঞাতনামা একজন ব্যক্তিফোন করে জানায় যে, আমার ছেলে শাহজাহান আলী গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি আছে। আমি সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক পপুলার হাসপাতালে আসি এবং জানতে পারি যে, আমার ছেলেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে মর্গে গিয়ে আমার ছেলের মরদেহ দেখে শনাক্ত করি।’

আয়েশা আরও বলেন, ‘তখন বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারি, ১৬ জুলাই বিকেল আনুমানিক ৫টা ৪৫ ঘটিকার সময় আমার ছেলে অজ্ঞাতনামা কোটাবিরোধীদের কর্তৃক গুরুতর রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়ে নিউমার্কেট থানাধীন টিটি কলেজের বিপরীত পাশে কাদের আর্কেড মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর পড়ে ছিল। চলমান কোটা সংস্কারের অজ্ঞাতনামা বিরোধীরা, জামায়াত, শিবির ও বিএনপির সশস্ত্র আসামিরা এক হয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে দিতে লোহার রোড, হকিস্টিক, লাঠি-সোঠা ইত্যাদি অস্ত্রসহ সায়েন্সল্যাব ক্রসিং হতে নিউমার্কেটের দিকে গাছ, লোহার রোলিং ভাঙচুর করতে করতে এগিয়ে আসে এবং রাস্তায় থাকা বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেয়। তখন কোটাবিরোধী অজ্ঞাতনামা আন্দোলনকারীরা, জামায়াত, শিবির ও বিএনপির সশস্ত্র আসামিরা এক হয়ে অতর্কিতভাবে নিউমার্কেট থানাধীন মিরপুর রোডস্থ টিটি কলেজের বিপরীত পাশে কাদের আর্কেড মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর আমার ছেলেকে আক্রমণ করে।’

মামলার অভিযোগে তিনি আরও বলেন, ‘অজ্ঞাতনামা আসামিরা আমার ছেলের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। যার ফলে আমার ছেলে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। উপস্থিত পথচারীরা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত ধানমন্ডিস্থ পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার ছেলের অবস্থা বেগতিক দেখে পপুলার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার আমার ছেলেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৬ জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ৫ ঘটিকার সময় মৃত ঘোষণা করেন।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com