বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রত্যেকটি গুম হওয়া পরিবারের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেন। এই পরিবারগুলোর দায়িত্ব এখন রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে বিএনপির সংহতি সভা’য় দেয়া বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
সভায় গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। তারা গুম হওয়া তাদের প্রিয় ব্যক্তিদের ফিরে পাওয়ার দাবি জানান। এসময় ছোট ছোট শিশুদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে সভামঞ্চ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা এখানে আছেন, ছেলে-মেয়েরা আছেন, পরিবারের সদস্যরা আছেন। তারা হাহাকার করছেন যে তাদের সেই গুম হওয়া প্রিয়জনকে ফিরিয়ে দাও। অপেক্ষায় ১২ বছর কেটে গেল, ফিরে আসবেন, কিন্তু আসেন না।’
তিনি বলেন, ‘শুকরিয়া জানাই, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, আমাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, ১৫ বছর আমাদের নেতাকর্মীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে একটি ভয়াবহ দানবকে সরানো হয়েছে। ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে দেশ। প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারছি আমরা।’
‘আওয়ামী লীগ সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে মানবতাবিরোধী যে অপরাধ গুম, সেটি করেছে ১৫ বছর ধরে। প্রতিবছর যখন গুম হওয়া পরিবারের সামনে দাঁড়াই তখন ভারাক্রান্ত লাগে, এদের সামনে এসে আমি কী জবাব দিব। কী জবাব আছে? জবাব নেই।’
বর্তমান অন্তর্বতীনকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার যে কমিটি আছে তাদের সাথে কথা বলেন। শুধু দুই মাসের হত্যাকাণ্ডের জন্য জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধি দল এলেই হবে না। স্বৈরাচার সরকার যতগুলো হত্যাকাণ্ড গুম, খুন করেছে প্রত্যেকটির তদন্ত যেন তারা করে। আপনারা বলবেন, তাহলেই তারা করবেন। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যতটি গুম, খুন হয়েছে প্রত্যেকটির তদন্ত জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে করতে হবে।’
বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে আহ্বান জানাই, প্রত্যেকটি গুম হওয়া পরিবারের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেন। আমি জানি এখানে অনেক পরিবার আছে যারা অনেক কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছে। অনেকের ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করছে অনেক কষ্টে। তাই গুম হওয়া পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের। যে তার বাবাকে হারিয়েছে তাকে আর ফিরে পাবে না, যে তার স্বামীকে হারিয়েছে সে তার স্বামীকে ফিরে পাবে না। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব এই পরিবারগুলোর দায়িত্ব গ্রহণ করা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, এখন পর্যন্ত আমরা পূর্ণ গণতন্ত্র ফিরে পাইনি। আসুন আমরা এই সরকারকে, যেটি আমাদের আন্দোলনের ফসল, তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করি। এই সহযোগিতার মাধ্যমে সরকার যেন সক্ষম হন একটি সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থা করার। নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে এবং সে নির্বাচিত প্রতিনিধি পার্লামেন্টে গিয়ে সরকার গঠন করবে। সেই সরকার জনগণের সমস্যার সমাধান করবে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা আত্মতৃপ্তিতে ভুগবেন না, সন্তুষ্টিতে ভুগবেন না, অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখনো দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্রের অভাব নেই। আমাদের মধ্যকার ঐক্যে শক্তিশালী করতে হবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্য কামনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশকে গণতন্ত্রে ফিরে যেতে সহযোগিতা করবে।’
গুম হওয়া বাবার কন্যা সাফার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন সাফা বলে- আমি আমার বাবাকে ফিরে চাই, আমি আমার বাবার হাত ধরে চলতে চাই, স্কুলে যেতে চাই – তখন আমরা কিছু বলতে পারি না। তাই বলতে চাই, রাষ্ট্রকেই এই পরিবারের ভুক্তভোগী পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে। এর সাথে যারা জড়িত তাদের প্রত্যেককেই আমরা চিনি, তারা কেউ একটি বাহিনীর প্রধান ছিলেন, একটি ইউনিটের প্রধান ছিলেন – এদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের কষ্ট হয়, যখন রাজনৈতিক নেতাদেরকে গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিন্তু হত্যাকাণ্ডে, গুমে যেসব ব্যক্তি জড়িত তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আশা করি, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা তাদেরকে গ্রেফতার দেখতে পাবো। বিচার দেখতে পাব।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরাসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।