করোনাভাইরাসের প্রভাবে নানা গুজবে দেশের পোল্ট্রি শিল্পে যেন দুর্যোগ নেমে এসেছিল। তবে গুজব কেটে যাওয়ায় আবারো ক্রেতাদের আস্থা ফিরে আসছে পোল্ট্রি শিল্পে। এতে নতুন করে আশার আলো দেখছেন পোল্ট্রি খামারিরা। কিছুদিন আগেও পোল্ট্রি খামারিরা মুরগির দাম না পেয়ে দিশেহারা ছিলেন। সারা দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার সাথে সাথে বয়লার মুরগি কেজি নেমে এসেছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। যা পানির দামের চেয়েও অনেক কম। অনেক পোল্ট্রি খামারি উৎপাদিত মুরগি ফেলে দিতেও বাধ্য হয়েছিলেন। ফলে অনেক খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন মুরগির দাম বাড়ায় খামারিদের মুখে হাসি ফুটেছে। পবিত্র রমজান মাসে মুরগি চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেক জায়গায় লকডাউন খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে ক্রেতা বাড়ার কারণে মুরগির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া, রাজাগাঁও, আখানগর সহ বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, পোল্ট্রি খামার থেকে মুরগি সংগ্রহ করে ২০০ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
সদর উপজেলার রুহিয়ার খামারি মোঃ দবরুল ইসলাম সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাসের শুরুতে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যায়। এতে ফার্ম মালিকরা লোকসানে কম দামে মুরগি বিক্রি করেন। যে কারণে তারা নতুন বাচ্চা উৎপাদনে যাননি। আগের যে বাচ্চা ছিল সেই বাচ্চা বড় করে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কমেছে। এখন লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। সেই সাথে মানুষের বাইরে বের হওয়ার হার বেড়েছে এবং বাজারে কেনাকাটার পরিমাণ বেড়েছে। এতে পোল্ট্রি মুরগির চাহিদাও বেড়েছে। মূলত এ কারণেই এখন পোল্ট্রি মুরগির দাম বেড়েছে। তিনি এক হাজার বয়লার মুরগির বাচ্চা আট টাকা দরে খামারে ঢুকিয়েছেন। প্রতিটি বাচ্চা এখন ওজনে দুই কেজি। তাতে তিনি খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকার বেশি লাভের আশা করছেন। তবে করোনার কারণে তারা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তা কাটিয়ে উঠতে কিছু দিন সময় লাগবে বলে জানান।
এ সময় পিকনিক, সুন্নতে খাতনাসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যায়। প্রয়োজন হয় গরু-ছাগল-মুরগির গোশতের। তবে এ বছর ব্যবসায়ীদের আশা তেমন একটা পূরণ হয়নি লকডাউনের কারণে। অন্যদিকে মুরগি দাম কম-সব মিলিয়ে চরম বিপাকে পড়েছিলেন খামারিরা।
রুহিয়া ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও শিবা ফার্মের মালিক প্রকাশ ঝাঁ নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনার কারণে রমজানের কিছু দিন আগেও আমরা মুরগি বিক্রি করতে পারিনি। বিক্রি করলেও অনেক কম দামে বিক্রি করতে হয়েছিল। রমজানের কারণে সাধারণ মানুষেরাও নিয়মিত মুরগি কিনছেন। মুরগি দোকানদারেরা মুরগি কেনা শুরু করেছেন। আমরা এখন খামার থেকে পাইকারি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং খুচরা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে মুরগি বিক্রি করতে পারছি। এখন খামারিরা মুরগি ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে। আমাদের প্রাণী সম্পদ বিভাগ সবসময় আমাদের পাশে আছেন।
উল্লেখ্য, মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব অফিস আদালত ও পরিবহন, রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুরগির গোশত নেমে আসে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। এতে খামারিরা লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ইতোমধ্যে সরকার কৃষিক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন। এগুলো ডেইরি, পোল্ট্রি এবং মৎস্য খামারিরাও পাবেন। প্রণোদনা পেলে করোনাভাইরাসের কারণে খামারিদের যে ক্ষতি হয়েছে তা তারা পুষিয়ে নিতে পারবেন।