বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন

সিলেটে করোনার থাবা, খোঁজা হচ্ছে নতুন হাসপাতাল

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০
  • ১৯২ বার

হিসাব মিলছে না সিলেটে। করোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। বাদ যাচ্ছে না কেউই। নতুন করে আক্রান্ত আসমা কামরান। সিলেটের সাবেক মেয়র কামরানের স্ত্রী তিনি। করোনায় আক্রান্ত হলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। করোনা আক্রান্ত সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে।

একান্ত সহকারী করোনা আক্রান্ত হওয়ায়  কোয়ারেন্টিনে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশাল বহর করোনা আক্রান্ত। পুলিশ, সাংবাদিকরাও সমানতালে আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসাসেবাও অপ্রতুল। মান্ধাতার আমলের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে কোনো মতে চলছে করোনা আক্রান্তদের সেবা। এই অবস্থায় সিলেটের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনও। গতকালই তিনি নতুন করে হাসপাতাল খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন। সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব লোকমান হোসেন মিয়াকে তিনি এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্র। বলতে গেলে, সিলেট জেলা ক্রমেই পরিণত হচ্ছে করোনার রেড জোনে। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বুধবার রাত পর্যন্ত রোগী বেড়েছে ৪৫ জন। এ নিয়ে সব মিলিয়ে সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫৯ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলাতে সবচেয়ে বেশি। আক্রান্ত ৩৮৫ জন।  জেলাতে এখন প্রতি ৩ দিনে একশ’ করে রোগী সংখ্যা বাড়ছে। বিষয়টি উদ্বেগের, উৎকণ্ঠারও। অন্যদিকে সিলেটের চিকিৎসাসেবা এখন ‘অপ্রতুল’। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেনÑ এখনো শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে কয়েকটি সিট খালি রয়েছে। কিন্তু এগুলো ভর্তি হতে কতক্ষণ? আক্রান্ত হয়ে যারা নিজ বাসাতে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে জায়গা হবে না। বারান্দা, রাস্তা সব ভর্তি হলেও রোগীর ঠাঁই দেয়া সম্ভব হবে না। পরিসংখ্যান বলছেÑ গত ১০ দিনে সিলেটে রোগী বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। গড়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ জন করে রোগী বেড়েছে। প্রতিদিন মাত্র ৩০০ রোগী পরীক্ষার পর এই ফলাফল। এখনো পরীক্ষার বাইরে বিপুল মানুষ। যাদের উপসর্গ তৈরি হয়েছে কেবল তাদেরই পরীক্ষা করা হচ্ছে। ঈদের আগে সিলেটে সব মহলে চিৎকার চেঁচামেচি হয়েছে বেশি। এর কারণ সিলেটে লকডাউনের কোনো বালাই ছিল না। নগরীর কয়েকটি মার্কেট খোলা ছিল। কেনাকাটা হয়েছে প্রচুর। মার্কেটে পা ফেলার সুযোগই ছিল না। রাস্তায় গাড়িও চলেছে। একই অবস্থা ছিল কাঁচাবাজার ও মাছ বাজারেও। কেউ মানেনি লকডাউন। কেউ মানেনি সামাজিক দূরত্ব। এ কারণে এখন রোগী সংখ্যা বেড়েই চলেছে। উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছে অনেকেই। তাদের বেশির ভাগেরই করোনা পরীক্ষা হয়নি। মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। সিলেটেই ১১ জন। নগরীর কাজিটুলা। ব্যস্ততম এলাকা। একই পরিবারের ব্যবসায়ী দুই ভাই মারা গেছেন। এর মধ্যে বাবুল খান করোনা আক্রান্ত হয়েই মারা  গেছেন। তার ভাইয়ের মৃত্যুও উপসর্গ নিয়ে। পরিস্থিতি পাল্টায়নি একটুও। ঈদের পর বুধবার থেকে ঘোষণা দিয়ে খোলা হয়েছে সিলেটের মার্কেট। এখন সব খোলা। সামাজিক দূরত্বের নেই কোনো বালাই। প্রশাসনও দিনে থাকে নির্বিকার। বিকাল হলেই হয় তৎপর। পুলিশ নামে নগরীতে। বন্ধ করে দেয় সব দোকানপাট। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন আগামী দু’সপ্তাহ সিলেটের জন্য ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। যে হারে সিলেটে আক্রান্ত হচ্ছে, সেভাবে বাড়লে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কষ্টকর হবে। এ কারণে রমজানের মাঝামাঝি পর্যায় থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে হাসপাতাল খোঁজা শুরু হয়। এর মধ্যে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় অবস্থিত নর্থইস্ট হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশের পর সেটি আরো বেগবান হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক (রোগতত্ত্ব ও নিন্ত্রয়ণ) আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, করোনার জন্য একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল খোঁজা শুরু হয়। এর মধ্যে সিলেটের নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এগিয়ে এসেছে। তারা ইতিমধ্যে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। সেটি যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এর জন্য ব্যয় ধরা হবে। এসেসমেন্ট চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নর্থইস্ট মেডিকেলকে কোভিড রোগীদের জন্য আনার চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, সিলেটে করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে রোগী প্রায় ভর্তি। এখানে আর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছিলো। এদিকে একেক করে আওয়ামী লীগ নেতানেত্রীদের আক্রান্ত হওয়া সিলেট আওয়ামী লীগেও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কারণ যারাই আক্রান্ত হয়েছেন তারা দিনরাত মানবসেবায় ব্যস্ত ছিলেন। করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে ঈদের পূর্ব পর্যন্ত তারা ছুটে গেছেন মানুষের কাছাকাছি। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান সহ অনেক নেতাই এখন স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে চলে গেছেন। সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান গতকাল জানিয়েছেন, এই মূহূর্তে সতর্ক হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এজন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তিনি আক্রান্ত হওয়া স্ত্রী আসমা কামরান, সহকর্মী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও আজাদুর রহমান আজাদের সুস্থতা কামনায় সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com