চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চাষীদের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে সুপার আমফান। ভেঙে গেছে চাষীর মেরুদণ্ড। কেউ কাঁদছেন বুক চাপড়ে আর কেউ নীরবে। তাদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস বলেছে, সুপার সাইক্লোন আমফানে উপজেলায় কলা, পেঁপে, আম, সবজি, পানবরজ, বোরো ধান, মুগডাল সহ সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সম্ভব্য ক্ষতির পরিমান ৩৫ কোটির টাকারও বেশি।
দশমী গ্রামের কলাচাষী মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, দামুড়হুদায় ও পাটাচোরা গ্রামের মাঠে আমার প্রায় সাড়ে সাত বিঘার পেঁপে বাগান রয়েছে। আমফানে আমার বাগান লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এ কথা বলতে গিয়েই চোখের জলে ভাসলেন।
বললেন, এ বাগান করতে বাজার ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ধার-দেনা করেছি। সাইক্লোন চাষীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে গেছে। এখন এই অবস্থায় কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।
কলাচাষী মোঃ হাফিজুরের মত অবস্থা দামুড়হুদার ঝনু ও বদনপুরের নুর ইসলামের। ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে তারা। ধার দেনা মাথায় চেপে গেছে।
আম ব্যবসায়ী আঃ গনি বলেন, হাতের সমস্ত পুঁজি মহাজনের দেনা করে আম বাগান কিনেছিলাম। মহাজনের দেনা পরিশোধ সহ পুঁজি হারা হয়ে গেলাম।
তিনি কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন।
মদনা গ্রামের কলা চাষী আঃকুদ্দুস বলেন, পরের জমি লিজ নিয়ে ও ঋণ করে সাত বিঘা জমিতে কলা বাগান করেছিলাম। কিছু কলা বিক্রি করার পর সাইক্লোন আমার স্বপ্ন কেড়ে নিয়ে গেছে।
পান চাষী ছানোয়ার বলেন, ১০ কাঠা জমিতে পান বরজ ছিলো গ্রামের লিয়াকত এবং সুমনের। আমার মত তাদেরও পানবরজ ঘূর্ণিঝড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
বোরো ধান চাষী শফিকুল বলেন, দামুড়হুদা সোলার বিলে আমার এক বিঘা ও বজলু নামের অপর চাষীর দুই বিঘা জমির- ধান কাটতে দেরি হওয়ার কারণে সাইক্লোন ও প্রচণ্ড বৃষ্টির কবলে পড়ে পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের মত অনেকের এ বিলের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট গেছে। এ ধরণের ক্ষতি হবে কখনো ভাবতে পারেনি।
জয়রামপুর গ্রামের ছাওারসহ একাধিক সবজি চাষী বলেন, লাউ, চিচিঙ্গে ও ঝিঙ্গে সহ নানা ধারণের সবজি ক্ষেত প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টির কবলে পড়ে পানিতে তলিয়ে পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সূত্রে জানা গেছে, সুপার সাইক্লোন আমফানে জেলায় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮২ কিলোমিটার। বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৪৮ মিলিমিটার। বুধবার (২০ মে) রাত ৯টা থেকে প্রচণ্ড বেগে সুপার সাইক্লোন আমফান আঘাত হানে এ জেলায়। রাত বাড়ার সাথে সাথে ঝড়ের গতিবেগ ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। প্রায় চার ঘণ্টা চলে আমফানের তাণ্ডব। তারপর ধীরে ধীরে গতিবেগ কমলেও একেবারে সকাল অবধি চলে ধ্বংসযজ্ঞ।
উপজেলা কৃষিবিদ ও কৃষিকর্মকতা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, এ জেলায় প্রচণ্ড বেগে সুপার সাইক্লোন আমফান আঘাত হানে। কলা, পেঁপে, আম, সবজি, পানবরজ, বোরো ধান, মুগডাল সহ সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সম্ভব্য ক্ষতির পরিমান ৩৫ কোটি ২৮ লাখ চার হাজার পাঁচ শ’ টাকা। চাষীদের এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কঠিনই হবে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারী চাষীদের মাঝে দ্রুত বিনামূল্যে সার, বীজ ও বিনা সুদে ঋণ বিতারণ জরুরিভাবে প্রয়োজন। তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা দ্রুত এই কঠিন সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।