বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন

দেশে করোনা নেগেটিভ বিদেশে পজিটিভ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০
  • ২২৩ বার

করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ ছিল বাংলাদেশের। সম্প্রতি কিছু দেশ তাদের কর্মীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বিমান চলাচলের বিশেষ অনুমিত দেয়। শর্ত হিসেবে সবার করোনামুক্তির সার্টিফিকেট আবশ্যিক করা হয়। কিন্তু করোনা নেগেটিভের সনদ নিয়ে বেশ কিছু দেশে যাওয়া বাংলাদেশিদের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ফলে সেসব দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিমানযাত্রার সময় সবাই করোনামুক্তির সার্টিফিকেট দেখিয়ে উড্ডয়নের সুযোগ পেয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কীভাবে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়েও সে দেশে গিয়ে পজিটিভ প্রমাণিত হচ্ছেন সেটি খতিয়ে দেখা উচিত। নইলে অন্যান্য দেশের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জন্মাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

সম্প্রতি কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়েও চার বাংলাদেশির শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চার্টাড ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা

আরোপ করে জাপান। সম্প্রতি বিমানের চার্টার্ড ফ্লাইটে জাপান যান অনেক বাংলাদেশি। কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে দেশটিতে প্রবেশ করেন তারা। কিন্তু জাপান যাওয়ার পর চার বাংলাদেশির কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে। এ চার বাংলাদেশির হেলথ সার্টিফিকেটে বলা ছিল, তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন এবং তাদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা নেই।

advertisement

সূত্র জানায়, জাপানের সিভিল অ্যাভিয়েশন ব্যুরো ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে কয়েকটি শর্তে চার্টার্ড ফাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছিল। শর্ত ছিল, চার্টার্ড ফ্লাইটের যাত্রীদের অবশ্যই হেলথ সার্টিফিকেট থাকতে হবে যাতে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন। সেই সঙ্গে যাত্রীদের মধ্যে উপসর্গও থাকা যাবে না। ২৯ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ বিমান জাপান ও ঢাকার মধ্যে চারটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।

অন্যদিকে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সব দেশের সঙ্গে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ থাকলেও তা চালু ছিল চীনের সঙ্গে। কিন্তু ঢাকা থেকে চীনের গুয়াংঝু শহরগামী একটি ফ্লাইটে ১৭ জন করোনা রোগী পাওয়ার পর চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশ-গুয়াংঝু রুটে বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বেইজিং। আগামী চার সপ্তাহে চীনের এই বিমান সংস্থা বাংলাদেশ-গুয়াংঝু রুটে বিমান চলাচল করতে পারবে না। গত রবিবার চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করে। এতে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশ-গুয়াংঝু ফাইট চলাচলে ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানানো হয়।

চীনের বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রশাসনের জারিকৃত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে চীনের গুয়াংডং প্রদেশের গুয়াংঝু শহরে আসা চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের ১৭ জন যাত্রীর নমুনা পরীক্ষায় করোনা ভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

এর আগে ১৩ মে দক্ষিণ কোরিয়ায় দুজন বাংলাদেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন। ওইদিন চার্টার্ড ফ্লাইটে বাংলাদেশে আটকে পড়া ইপিএসকর্মী ও শিক্ষার্থীরা কোরিয়ার ইনচন বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেই বিমানের যাত্রীদের করোনা পরীক্ষায় দুজন বাংলাদেশির করোনা পজিটিভ আসে। বিষয়টি নিশ্চিত করে দূতাবাস একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ওই ফ্লাইটের যাত্রীদের মধ্যে পাঁচজন কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন কোরিয়ান এবং দুজন বাংলাদেশি।

এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে তাইওয়ানে ফেরা এক দম্পতির করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগে, বাংলাদেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে তারা পরীক্ষা করিয়েছিলেন। সে সময় তাদের ফল নেগেটিভ আসে। গতকাল মঙ্গলবার তাইওয়ানের তাইপে টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে দ্য সেন্ট্রাল এপিডেমিক কমান্ড সেন্টারের (সিএসিসি) বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাইওয়ানে গতকাল করোনায় আক্রান্ত আরও দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৪৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন শনাক্ত দুজন স্বামী-স্ত্রী। তারা বাংলাদেশে কাজ করতেন। মালয়েশিয়া হয়ে ১৩ জুন তারা তাইওয়ানে নিজ বাসায় ফিরেন। গত ১ জুন থেকে তারাই প্রথম দেশের বাইরে থেকে আসা করোনা রোগী।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন আমাদের সময়কে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সম্প্রতি জাপান, চীনে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশিরা সে দেশে করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ ধরা পড়েছে। গণমাধ্যমে খবর এসেছে, আমাদের দেশে একদল অসাধু ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে করোনা নেগেটিভ-পজিটিভ সার্টিফিকেট বিক্রি করছে। এভাবে চললে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক আমাদের সময়কে বলেন, এ রকম ঘটনা দেশের ভাবমূর্তির জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। এখানে তিনটি বিষয় লক্ষণীয়। প্রথমত জানা যাচ্ছে এক শ্রেণির মানুষ টাকার বিনিময়ে করোনার সার্টিফিকেট বিক্রি করছে,

আবার দেখতে হবে আমাদের স্যাম্পল কালেকশন ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, পরিবহন ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, আবার পরীক্ষাগারে স্যাম্পল ঠিকমতো সংরক্ষণ হচ্ছে কিনা। এর একটিও ভুল হলে ফলে পরিবর্তন হতে পারে। আবার পরীক্ষায় অনেক সময় ফলস নেগেটিভ ফল আসতে পারে। আমাদের যেটা করতে হবে, নকল সার্টিফিকেট যেন কেউ সংগ্রহ করতে না পারে সে জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা ছাড়া স্যাম্পল কালেকশন, সংরক্ষণ, পরিবহন ঠিকমতো হচ্ছে কিনা সেটি নজরদারি করতে হবে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদুল আহসান বলেন, যে সার্টিফিকেট তারা নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন সেটি দেখার আমাদের এখতিয়ার নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভালো করেই জানে। সার্টিফিকেট কিন্তু সরকারিভাবে দেয়। আর বাইরে থেকে সার্টিফিকেট নেওয়া মানে সেটি ভুয়া। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে এ বিষয়ে কাজ চলছে। বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ শাহরিয়ার বলেন, সার্টিফিকেট জাল কিনা সেটি পরীক্ষা করে এয়ারলাইন্স ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। আমরা পরীক্ষা করি যাত্রীর শরীরে জ্বর আছে কিনা। কোনো লক্ষণ আছে কিনা। আমরা এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এ ব্যাপারে যেন তারা সতর্ক হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com