আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি করে পাঠানোর সময়ই জানতেন এ জাতি তার মহান সৃষ্টিকর্তার অবাধ্য হবে, বড় বড় পাপে লিপ্ত হবে, জমিনে একে অপরের শান্তি ভঙ্গের কারণ হবে। তবে একটা সময়ে এসে আবার অনুতপ্ত হয়ে সে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনাও করবে। বান্দার দ্বারা কখনও কোনো পাপ হয়ে গেলে পরে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসার এ বিষয়টিই মহান আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। পাপের পর তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসা এক মহৎ গুণ। বান্দার এ গুণটির কথা আল্লাহ আগে থেকে জানতেন বলেই ফেরেশতারা মানবজাতি সৃষ্টির বিপক্ষে অবস্থান নিলেও আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করলেন একক কুদরত ও প্রজ্ঞা দিয়ে। মানুষের মধ্যে পাপ ও পুণ্য দুটি গুণই বিদ্যমান। তবে ফেরেশতারা শুধু মানবজাতির অবাধ্যতার বিষয়টির কথাই ভাবতে পেরেছিল। কারণ আল্লাহ ছাড়া অন্য সবার জ্ঞানই অপূর্ণ। আর মহান আল্লাহর জ্ঞান পরিপূরণ ও শাশ্বত; তাই তিনি মানুষের পাপ ও পাপমোচনে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে তওবার মাধ্যমে ক্ষমাপ্রার্থনাÑউভয়টির ব্যাপারেই জ্ঞাত ছিলেন। মানুষের এ ক্ষমাপ্রার্থনার সুন্দর গুণের দিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ ফেরেশতাদের উদ্দেশে বলেছিলেনÑ‘নিশ্চয়ই আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।’ (সূরা বাকারা : ৩০)।
মানুষ পাপপ্রবণ জাতি। দৈনন্দিন পাপ করে চলে মানুষ। একেকটি পাপ মহান আল্লাহর রহমত ও কল্যাণ থেকে মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়। আর আল্লাহ থেকে যে মানুষের অবস্থান দূরে, সে কখনোই সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারে না। আল্লাহ বলেনÑ‘(হে নবী!) তুমি কখনোই তাঁকে (আল্লাহ) ব্যতীত অন্য কোনো আশ্রয় পাবে না।’ (সূরা কাহফ : ২৭)। অতএব পাপমোচনে তওবার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাকে আল্লাহর দিকে ফিরে যেতেই হবে। আর তওবার মাধ্যমে বান্দা নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ হয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেনÑ‘পাপ থেকে তওবাকারী হচ্ছে সেই লোকের মতো, যার কোনো পাপই নেই।’ (সুনানু ইবনে মাজাহ : ৪২৫০)। অধিক পাপে জড়িয়ে অনেক বান্দা আল্লাহর ক্ষমা ও ভালোবাসা পাওয়ার ব্যাপারে আশাহত হয়ে পড়েন। একজন মোমিনের এমনটি কখনোই হওয়া উচিত নয়। একজন মোমিন যত পাপই করুক না কেন, নবীজি (সা.) তাকে আশার বাণী শুনিয়েছেন। নবীজি (সা.) বলেনÑ ‘তোমাদের কৃত পাপরাশি যদি আসমান স্পর্শও করে ফেলে, আর যদি তোমরা (প্রকৃত) তওবা করো; তবে অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের তওবা কবুল করে নেবেন।’ (সুনানু ইবনে মাজাহ : ৪২৪৮)। অসংখ্য পাপের পরও বান্দার আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার জন্য এর চেয়ে বড় আশার বাণী আর কী হতে পারে।
তওবা কী ও কীভাবে: ‘তওবা’ কোনো আনুষ্ঠানিকতার বিষয় নয়। তওবার জন্য কোনো ব্যক্তির শরণাপন্ন হওয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই। আরবি ভাষার শব্দ ‘তওবা’র আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা এবং অনুতপ্ত হওয়া। উদ্দেশ্য হলো, কৃত পাপকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে ভবিষ্যতে আর অনুরূপ পাপ না করার ব্যাপারে বান্দার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে আল্লাহর পথে ফিরে আসা। এর পাশাপাশি বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে থাকা।
তওবা কবুলের সময়: আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যে কোনো সময়ই তওবা করা যায়। তবে হ্যাঁ, কিছু সময়ে তওবা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর একটি তাৎপর্যপূর্ণ হাদিস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আল্লাহর নবী (সা.) বলেনÑ‘আমাদের সবার মহান রব প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ সময় বাকি থাকতে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, কেউ কি আছে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব; কেউ কি আছে আমার কাছে কিছু চাইবে? আমি তার চাওয়া মেটাব; কেউ কি আছে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ (বোখারি : ১১৪৫)। হাদিসটি থেকে আমরা জানতে পারলাম, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ স্বয়ং প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন! তাহলে পাপে জর্জরিত এবং হাজারো অভাবে অভাবগ্রস্ত একজন সাধারণ বান্দা কেন শেষ রাতে জেগে উঠে সেই মহান আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে পারবে না? এছাড়াও পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর বান্দার দোয়া কবুল হয় মর্মে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) কে একবার প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন সময়ে দোয়া অধিক কবুল হয়? নবীজি (সা.) বললেনÑ‘শেষ রাতে এবং ফরজ নামাজগুলোর পরে।’ (জামে তিরমিজি : ৩৪৯৯)।