রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১১ অপরাহ্ন

করোনা পরীক্ষার কৌশল পাল্টে যা করছে ভারত

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০
  • ২৭১ বার

ভারতের শুক্রবারের হিসেবে তার আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষের শরীরে, আর এই সময়ে মারা গেছেন চার শ’রও বেশি মানুষ। এই হারে যখন সংক্রমণ বাড়ছে ভারতে, তখন জনসংখ্যার তুলনায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার সংখ্যা অন্যান্য বড় দেশগুলোর তুলনায় এখনো খুবই কম। ভারতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার চিত্র এটাও পরিষ্কার করে দেখাচ্ছে যে, বিভিন্ন রাজ্যের পরীক্ষার সংখ্যার মধ্যেও বড় ধরণের ফারাক আছে।

তবে এই সময়ে পরীক্ষা নিয়ে স্ট্র্যাটেজি পাল্টাচ্ছে ভারত। তারা এখন হাসপাতালের বেড আর রোগীর চিকিৎসার ওপরে বেশি নজর দিতে চাইছে।

ভারতের চিকিৎসা বিজ্ঞানের নীতিনির্ধারক সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে কদিন আগে প্রকাশিত একটি নির্দেশে তারা মন্তব্য করেছে বেশ কিছু নতুন পদ্ধতির কীট পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা শুরু হলেও ভারতের মতো বড় দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষা এখনো একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে দিনে একশোর মতো পরীক্ষা হচ্ছিল, সেখান থেকে কয়েক মাসের মধ্যে এক লাখ নব্বই হাজার পরীক্ষা এখন করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যে পরীক্ষার সংখ্যায় বড়সড় ফারাক থাকছে।

উত্তরপ্রদেশের উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে, যেখানে মারা গেছেন ৫৬৯ জন। যদিও ওই রাজ্যে প্রতি ১০ লাখে পরীক্ষার সংখ্যাও যেমন খুব কম, তেমনই পরীক্ষায় পজিটিভ ধরা পড়ার হারও খুব কম।

তাই আইসিএমআর এখন কোভিড-১৯ পরীক্ষার থেকেও বেশি জোর দিচ্ছে মৃত্যুহার ঠেকানোর ওপরে, হাসপাতালের বেডের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে, যাতে উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী এলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া যায়।

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোর যে জাতীয় সমন্বয় কমিটি গড়া হয়েছে, তার প্রধান ডা. গিরধার গিয়ানি বলছিলেন, ‘দিল্লি লাগোয়া রাজ্য উত্তরপ্রদেশে খুবই কম সংখ্যায় পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু দিল্লি বা মুম্বাইয়ের সাথে মৃত্যুহার তুলনা করলে সেটাও উত্তরপ্রদেশে অনেক কম।’

‘এটা থেকে একটা কথাই উপলব্ধি করা যাচ্ছে যে পরীক্ষার হার বাড়ালে উপসর্গহীন রোগী যেমন শনাক্ত করা যাবে, তাদের পৃথক করার উপায় ভাবা যাবে, আবার কনটেইনমেন্ট জোন চিহ্নিত করাও সম্ভব হবে।’

‘কিন্তু মৃত্যুহার ঠেকাতে গেলে প্রয়োজন চিকিৎসা ব্যবস্থা – হাসপাতালের বেড। তাই এখন চিকিৎসার বন্দোবস্ত করার ওপরেই জোর দেয়া হচ্ছে, কারণ পরীক্ষা হোক বা না হোক, কেউ অসুস্থ হলে উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসবেনই, সেই সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা তৈরি রাখাই বেশি জরুরি,’ বলছিলেন ডা. গিরধার গিয়ানি।

তবে কলকাতার বিশিষ্ট মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. অমিতাভ নন্দী বলছিলেন, এধরণের মহামারির জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা আর চিকিৎসা – দুটোই।

‘পরীক্ষা আর চিকিৎসা – দুটোরই সমান প্রয়োজন এধরণের মহামারি রোধ করতে। রোগীকে খুঁজে বার করতে হবে আমাদের। এক নম্বর হল হাসপাতাল আর পরীক্ষাগারগুলোতে নমুনা পরীক্ষা। আর অ্যান্টিবডি কিট এবং অ্যান্টিজেন কিট ব্যবহার করে। এগুলো একেবারে স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি,’ বলছিলেন ডা. নন্দী।

‘কিন্তু পরীক্ষার ওপর থেকে জোর সরিয়ে হাসপাতালের বেড, অর্থাৎ চিকিৎসার ওপরে বেশি জোর দেওয়ার মানেই হচ্ছে এটাই আশা করা হচ্ছে যে, প্রচুর রোগী আসবে হাসপাতালে। তাদের মৃত্যু ঠেকাতে হবে। কিন্তু উপসর্গ নিয়ে একজন রোগী যখন হাসপাতালে আসার পর্যায়ে যাবে, তার আগেই তো সে এলাকায় বা পরিবারে সংক্রমণটা ছড়িয়ে ফেলছে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করব কেন আমরা? কেন আগেই খুঁজে বার করা হবে না?’ প্রশ্ন ডা. অমিতাভ নন্দীর।

পরিকল্পনার ব্যর্থতা ঢাকতেই এখন নতুন স্ট্যাটেজির কথা বলা হচ্ছে বলে মনে করেন ডা. নন্দী।

আইসিএমআর করোনা পরীক্ষা নিয়ে যে নতুন নির্দেশিকা দিয়েছে, তাতে প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিগুলোর সাথেই অ্যান্টিজেন আর অ্যান্টিবডি – দুধরণের পরীক্ষার কথাই বলা হয়েছে।

অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ক্ষেত্রে অতিঝুঁকিপূর্ণ পেশায় যারা আছেন, যেমন পুলিশ, গাড়ি চালক, দোকানদার আর স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে এই পরীক্ষা বাড়াতে বলা হয়েছে ওই নির্দেশে।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com