নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পুরো বিশ্বই বিপর্যস্ত। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে সরকার শুরু থেকেই নিচ্ছে নানা সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত চার মাসে সাধারণ ছুটি ঘোষণা, জোনভিত্তিক লকডাউন, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, টেস্টিং বুথ ও ল্যাব বাড়ানো, কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফি নির্ধারণসহ প্রতিনিয়ত নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
এসব সিদ্ধান্ত সময়োপোযোগী হচ্ছে কিনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞদের মতামত কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, এর বাস্তবায়ন কতটা সমন্বিত এমন প্রশ্ন উঠেছে। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে বিশদভাবে তুলে ধরেছে বিষয়টি।
পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চেয়ারপারসন ডা. শারমিন ইয়াসমিন বলেন, ‘এখানে কিন্তু আমাদের একটা ইমারজেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস সবসময় থাকতে হবে। এটা আমাদের একটা ইমারজেন্সি। এটা (করোনাভাইরাস) কিন্তু দীর্ঘদিন থাকবে।’
তিনি আরও বলেন ‘বৈজ্ঞানিকভাবে কিন্তু আমাদের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি সিদ্ধান্তগুলো জনগণের উদ্দেশ্যে সবশেষে ওনারা প্রচার করেন, সেখানে তার প্রতিফলন দেখি না।’
মহামারি মোকাবিলায় সরকার অনেক সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেটা যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় কার্যকর ফল মিলছে না। বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে যেসব সুপারিশ করছেন সেগুলো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়নেও দেখা যায় ধীরগতি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সিদ্ধান্ত এবং বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে কমিটির অনেক সদস্যই হতাশা জানাচ্ছেন। আমরা সুপারিশ করেই যাচ্ছি সেগুলো সিদ্ধান্ত আকারে ট্রান্সলেট হতে অনেক সময় লাগছে। কোনো কোনোটা হচ্ছেই না। কোনটা হবে আর কোনটা হবে না, আমাদেরকে ফিডব্যাকও দেওয়া হচ্ছে না।’
তিনি আরও জানান , একমাসেরও বেশি হয়ে গেছে তারা রোগী শনাক্তের জন্য র্যাপিড টেস্ট চালুর সুপারিশ করেছিলেন যার বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। অথচ অতি দ্রুত করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ফিস নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়ে গেছে যেটা বেশ সমালোচিত।
জাতীয় কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
মহামারি মোকাবিলায় চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা, টেস্ট, তদারকিসহ সার্বিক সমন্বয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় কমিটি কতটা সক্রিয় ভূমিকা রাখছে, সেটি অস্পষ্ট বলেই মনে করেন ডা. নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভ্রান্তির মধ্যেই আছি। ঠিক বুঝতে পারছি না। জাতীয় কমিটি হেডেড বাই হেলথ মিনিস্টার, এই কমিটির নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে কিনা আমরা কিন্তু জানতে পারছি না। ওনাদের যে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত এটা কমিটির মাধ্যমে হচ্ছে নাকি ওনারা নিজেরাই মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এটাও বোঝা যাচ্ছে না।’
এ পর্যায়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের চার মাস পরে উচ্চহারে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেছে পৌনে দু্ই লাখে আর মৃত্যু দু্ই হাজার দুইশো। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা প্রথম থেকেই করোনাভাইরাস বিস্তাররোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা এবং সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাস প্র্রতিরোধে যখন যেটা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিছু কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে বিলম্বের পেছনে যুক্তি তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র আয়েশা আক্তার।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে কাজটা করবো সেটা একদম অথেনটিকভাবে হবে এবং ভালোভাবে যেমন ল্যাবগুলো স্থাপন করেছি বায়োসেফটি মেইনটেইন করে। সবকাজে যখন আমরা সঠিকভাবে এবং গুণগত মানটা দেখবো তখন কিন্তু সময় একটু লাগবেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের টেকনিক্যাল কমিটি আছে। অনেকগুলো কমিটি আছে। সে কমিটিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তারপর সেগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে কমিটি গঠন করা আছে। কন্ট্রোলরুম আছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কন্ট্রোলরুম আছে।’