প্রার্থিতা বাতিল সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাবকে আত্মঘাতী বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সিদ্ধান্তের ফলে ইসি নিজেদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজরায় পরিণত করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আজ শুক্রবার এক দোয়া মাহফিলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’৭২ এর সংশোধন করে প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিলের সরাসরি ক্ষমতা বিলুপ্ত করার প্রস্তাবের সমালোচনা করে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্র মিন করলে পরে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সার্বভৌম সত্ত্বা। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের ৯১ (ই) ধারায় আছে-নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার বা বাতিলের ব্যাপারটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে। সংবিধান তাদেরকে (ইসি) দায়িত্ব দিয়েছে এই স্বাধীনতার, তাদের এটা নিজস্ব স্বাধীনতা।’
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব বলেন, ‘কেউ কী নিজের স্বাধীনতা খর্ব করে? আজকে নির্বাচন কমিশন স্বেচ্ছায় সমর্পন করেছেন নিজেদের স্বাধীনতা সরকারের কাছে। তারা (নির্বাচন কমিশন) নিজেরা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেরাই নিজেদেরকে একেবারে…আমি যেটা বলব হিজরায় পরিণত করছেন। হিজরা- না পুরুষ না মেয়ে।’
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর ৯১(ই) ধারা অনুযায়ী কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের সরাসরি ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের কাছে। সম্প্রতি গণপ্রতিনিধিত্ব আইন-২০২০ এর খসড়া তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন। গত বুধবার কমিশনের বৈঠকে ৩৪টি সুপারিশ সম্বলিত খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে।
রিজভী বলেন, ‘আজকে নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতাটাকে কেটে নিয়ে অর্থাৎ কার প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে না রাখতে হবে- এটা এখন আলাদা পূর্ণাঙ্গ আইন করার জন্য তারা (ইসি) একটি রেজুলেশন নিয়েছে এবং সেটা এখন যাবে সংসদে, সেখানে আইন হবে। অর্থাৎ এই নির্বাচনের কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিজেদের আত্মার অনুসারী, নিজেদের চেতনার অনুসারী, নিজেদের মনের মাধুরি মেশানোর লোক, জনতার মঞ্চের লোককে বসিয়েও শেখ হাসিনা মোটেই স্বস্তি পাচ্ছেন না।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা এটাকে আইন করে সরকার নিজের হাতে রাখবে। প্রয়োজন হলে যদি তার কথা কেউ না শুনে তাহলে- তুমি বাদ। ওই আইন এমন হবে শেখ হাসিনা হবেন অখণ্ড ক্ষমতার অধিকারী। বিএনপি কথা শুনছেন না- ওর রেজিস্ট্রেশন বাদ, ওমুক দল কথা শুনবে না- ওর রেজিস্ট্রেশন বাদ। আইন শেখ হাসিনার হাতে। আর এই ক্ষমতা তুল দিচ্ছেন সরকারের কাছে স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার কতিপয় নির্বাচন কমিশনার। একজন এখানে নো- অব ডিসেন্ট দিয়েছেন।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার দেখলাম টিআইবিও এর প্রতিবাদ করেছে। তার মানে বুঝেন বাকশাল কীভাবে ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। বাকশাল মানে কী? বাকশাল মানে একদলীয় শাসন, বাকশাল মানে অন্যের কোনো কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে না, গণমাধ্যম থাকবে না, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে না। কেউ যদি সরকারের সমালোচনা করে তাহলে জননিরাপত্তা আইনে তাকে আটকিয়ে রাখা হবে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থাৎ শেখ হাসিনা অখণ্ড প্রভু। সে যা বলবেন- করবেন তার বিরুদ্ধে কেউ যদি কণ্ঠ উচ্চারণ করে তাহলে তার পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর- এটাই হচ্ছে বাকশাল। নতুন সংস্করণে, নতুন আঙ্গিকে, নতুন মাত্রায় শেখ হাসিনা ওইটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই আরপিও’র নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বিলুপ্ত করে তিনি একেবারে নতুন আইন করতে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের অধিকারকে ছিনতাই করে সরকার নিজের হাতে চাচ্ছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের ক্ষমতার।’
আজ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ন্যাশনালিস্ট এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (রুনেসা) উদ্যোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুন্নুজান হলের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি দিলরুবা শওকতের মৃত্যুতে এই দোয়া মাহফিল হয়। গত ১ আগস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত মারা যান দিলরুবা। তার স্বামী বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শওকত ।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মল্লিক মো. মোকাম্মেল কবিরের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রমেশ দত্ত, আমিনুল ইসলাম, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, রুনেসার নুরুজ্জামান মানিক, অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান তপন, নিশতিয়াক আহমেদ রাখি, মাহবুব আলম ফরহাদ প্রমুখ।