একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া নেতারাই পাঁচটি আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন। সম্প্রতি দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পুরনোদের প্রার্থী করার বিষয়ে মত দেন নেতারা। পরে হাইকমান্ডের মৌখিক নির্দেশনা পেয়ে ওইসব প্রার্থী মাঠেও নেমেছেন।
ঢাকা-১৮ আসনে বিগত নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন। তবে এবার জোটের কেউ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ না করায় এ আসনে বিএনপির নতুন মুখ আসবে। যদিও পাবনা-৪ আসন ছাড়া চূড়ান্তভাবে এখনও প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি দলটি। শিগগিরই এসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারক একাধিক নেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, করোনাকালে উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য ছিল। বেশিরভাগ নেতা বর্তমান নির্বাচন কমিশন আর ক্ষমতাসীনদের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়ার ত্রুটি ও পক্ষপাতমূলক বাস্তবতা উন্মোচন করতে এবং নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব তৈরির জন্য নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দলটির হাইকমান্ড।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্তের আলোকে ইতোমধ্যে পাবনা-৪ আসনে হাবিবুর রহমান হাবিবকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী দলের মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করে। বাকি চারটি উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে গেছে যে, এখন জনগণও নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করছে না। তারপরও আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্রের স্পেসকে বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তাই উপনির্বাচনে যারাই মনোনয়ন পাবেন তারাই শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন, লড়াই করবেন।
ইতোমধ্যে তিনটি আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, ২৬ সেপ্টেম্বর পাবনা-৪ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আর ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের ভোটগ্রহণ হবে ১৭ অক্টোবর। এছাড়া সিরাজগঞ্জ-১ ও ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচন হবে। তবে এ দুই আসনে এখনও তফসিল ঘোষণা হয়নি।
সূত্র জানায়, পাঁচটি আসনে উপনির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তের পরপরই নড়েচড়ে বসেছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। প্রত্যেক আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও গত জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের ওপরই ভরসা রাখতে চাইছেন দলটির হাইকমান্ড। তবে তারা যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না চান সেক্ষেত্রে অন্য প্রার্থী ঠিক করবে বিএনপি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৪ আসনে থেকে দলীয় মনোনয়ন পান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব। আসন্ন উপনির্বাচনেও ইতোমধ্যে তাকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।
নওগাঁ-৬ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পান সাবেক এমপি আলমগীর কবির। এবারও তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, আলমগীর কবির নির্বাচন করবেন কিনা এখনও নিশ্চিত না। তিনি নির্বাচন করতে না চাইলে সেক্ষেত্রে তার ভাই আনোয়ার হোসেন বুলুকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনে গত নির্বাচনের বিএনপির প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী রোমানা মোর্শেদ কনক চাঁপাকে আসন্ন উপ-নির্বাচনেও মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে।
ঢাকা-৫ আসনেও গত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নবী উল্লাহ নবীকেই মনোনয়ন দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
আর ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশী কাজ করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির নেতা শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন। তবে এবার তিনি নির্বাচন করছেন না বলে বিএনপির নতুন মুখ দেখা যাবে এই আসনে। বিএনপির তিনজন প্রার্থীর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ, ব্যবসায়ী বাহাউদ্দিন সাদী এবং ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন রয়েছেন।
বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে বলেন, এম কফিলউদ্দিন আহম্মেদ ও বাহাউদ্দিন সাদী দুজনই স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়। যদিও বাহাউদ্দিন সাদী গত নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের চিঠি পেয়েছিলেন। এ দু’জনের মধ্যে একজনকে প্রার্থী করার ব্যাপারে হাইকমান্ডকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে।
কফিলউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমি উত্তরার আদি বাসিন্দা। ৩২ বছর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ইতোমধ্যে আমি নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছি। দলের সিনিয়র নেতাদের পরামর্শে মাঠে নেমেছি। আশা করছি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
বাহাউদ্দিন সাদী বলেন, স্থানীয় নেতাকর্মীরা চেয়েছিলেন বলেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নের চিঠি পেয়েছিলাম। তখন থেকে দলের নেতাকর্মীদের ওপর আমার যে দায়িত্ব তা আরও বেড়েছে। অতীতেও তাদের বিপদ-আপদে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। দলের মনোনয়ন পেলে আসন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাব।