আইন সংশোধনের নামে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিধ্বস্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও দুর্বল করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি দেশের মানুষের ও রাজনৈতিক দলের আস্থা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার সময়কাল ইতিমধ্যে তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়েছে। এই সময়কালে এই কমিশন একটিও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে পারেনি। এই অবস্থায় তারা নির্বাচনী আইন সংশোধনের নামে বিধ্বস্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও দুর্বল করার অপপ্রয়াস করছে। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের উচিত নির্বাচনী ব্যবস্থার যে ক্ষতি তারা ইতিমধ্যে করেছে সেই ক্ষতিপূরণ করা, নতুন কোনো সর্বনাশের হাত থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাকে রক্ষা করা। বর্তমানে নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি দেশের মানুষ ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনো রাজনৈতিক দলের ন্যূনতম শ্রদ্ধা কিংবা আস্থা নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত ১০ বছরে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে যারা গলাটিপে হত্যা করেছে কেবলমাত্র তারা এবং তাদের সহযোগী হিসেবে নিলর্জ্জ ভূমিকা রাখা বর্তমান শাসকগোষ্ঠির বশংবদ নির্বাচন কমিশনই দায়ী। আমরা বলতে চাই, এই নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ সরকারের তত্বাবধানে এবং একটি নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য গণ আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।’
রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন-২০২০ প্রণয়ন, নির্বাচনী আইন (আরপিও) সংশোধনী প্রস্তাব এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনী আইন-২০২০ প্রণয়নে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই উদ্যোগ অস্বাভাবিক, অনভিপ্রেত, অগ্রহণযোগ্য এবং মহল বিশেষের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অপকৌশল বলে আমরা মনে করি। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কমিশনের এই উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।’
আরপিও সংশোধনের উদ্যোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবে যেসব বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে তার অন্যতম হলো কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা, প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক ভোট গ্রহণ বন্ধ করা, সর্বোপরি আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য প্রার্থিতা বাতিলের (৯১ ই ধারা) ক্ষমতা রোধ। এসব ক্ষমতা রোধ করলে কমিশন একটি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হবে, যার মাধ্যমে কার স্বার্থ সিদ্ধি হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
ফখরুল বলেন, ‘তাদের (ইসি) সবচেয়ে ভয়ানক অপচেষ্টা হলো আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থার কফিনের শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়া। তারা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে স্থায়ী ভাবে পঙ্গু করার জন্যও যেন উঠেপড়ে লেগেছে। ভবিষ্যতে একটি ভালো নির্বাচন কমিশন পাওয়ার পথ রুদ্ধ করতে চায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন। ২০১৪ সালে ইসি নির্বাচন করেছে রাজনৈতিক দলবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালে করেছে ভোটারবিহীন ‘‘নৈশ নির্বাচন’’। প্রস্তাবিত আরপিওর মাধ্যমে আগামীতে করবে নির্বাচন কমিশনবিহীন প্রহসনের নির্বাচন।’ রকিব উদ্দিন কমিশন থেকে শুরু করে গত ১০ বছরে কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস ও অকার্যকর করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আইন হচ্ছে একটি রক্ষাকবচ। আইন পরিবর্তনের কাজে কমিশন হাত দিতে পারে না। সরকার চাইলে নির্বাচন কমিশন সরকারকে আইন করার ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু স্বপ্রণোদিত হয়ে কমিশন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আইন পরিবর্তনর করার মাধ্যমে ক্ষমতা খর্ব করা অনেকটা আত্মহত্যার শামিল। আইন পরিবর্তনের করার মাধ্যমে তারা জনগনের কাছে আরো ঘৃণা হিসেবে গণ্য হবে। বর্তমান আইনে মনোনয়ন পত্র বাতিলের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। কমিশন এই ক্ষমতা নিজেদের কাছে রাখতে চায় না। ফলে কমিশন বিড়ালে পরিণত হবে- এই মর্মে একজন নির্বাচন কমিশনার মন্তব্য করেছেন।’