করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দ্রুত পেতে সরকারকে অগ্রিম টাকা জমা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। একইসঙ্গে সীমিত পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গাপূজা উদযাপন, ভ্যাকসিনের জন্য প্রয়োজনীয় কোল্ড চেইনের ব্যবস্থা করা, একাধিক কোম্পানি বা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করাসহ আরও কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়।
কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত ১৯তম অনলাইন সভায় এই পরামর্শ দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে অলোচনা করা হয়। দ্রুত ভ্যাকসিন সংগ্রহের ও বিতরণের প্রস্তুতিতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য পরামর্শক কমিটি সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুত ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি দিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পৃথিবীর সব দেশ ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় রয়েছে। কয়েকটি দেশ ভ্যাকসিন কেনার জন্য অগ্রিম টাকাও জমা দিয়েছে। এ ছাড়া গ্যাভির ভ্যাকসিন পেতে বেশ দেরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই বাংলাদেশেরও অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে ভ্যাকসিন বুকিং করা প্রয়োজন।
এতে আরও বলা হয়, কোনো কোনো টিকার জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রার কোল্ড চেইন ব্যবস্থা আমাদের নেই। ভ্যাকসিন নির্বাচনের ক্ষেত্রে সে বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখা যেতে পারে, অথবা উল্লিখিত তাপমাত্রার কোল্ড চেইন ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলেও পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। একইসঙ্গে কোনো একটি ভ্যাকসিনের জন্য কাজ না করে একাধিক উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষ করে যেসব দেশ ভ্যাকসিন তৈরি করছে, সে দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন বলেও মতামত দেওয়া হয়েছে।
কমিটি মনে করে, ভ্যাকসিন প্রাপ্তির পর সেটা দেওয়ার কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করতে হবে এবং এখনই ভ্যাকসিন ডিপ্লয়মেন্ট প্ল্যান চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। ভ্যাকসিন প্রদানের পরবর্তী সময়ে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলোআপ করার ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
ভ্যাকসিন বিষয়ক বিশেষ কমিটিতে নাইট্যাগ ও জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রতিনিধি রাখার পরামর্শও দেওয়া হয় সভায়।
কমিটি জানিয়েছে, ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে যেসব প্রতিষ্ঠান উপযুক্ত ও দক্ষ তাদের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। আইসিডিডিআর-বি এর সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আইইডিসিআর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
বর্তমানে পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে, যার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম মন্তব্য করে কমিটি জানিয়েছে, নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারলে আরও বেশি রোগী শনাক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য কমিটি অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্টের ব্যাপারে নীতিমালা ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনের কিটের এখনো অনুমোদন দেয়নি জানিয়ে কমিটি মনে করে, তিন পদ্ধতিতে (পিসিআর, এন্টিজেন ও এন্টিবডি টেস্ট) পরীক্ষা কার্যক্রম পাশাপাশি থাকলে তা কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আর এখন সেরোসার্ভিল্যান্স নিয়ে কাজ করার সময় এসে গেছে, যার জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করাও প্রয়োজন। একইসঙ্গে যেসব কারণে কোভিড-১৯ পরীক্ষা কমে গেছে, সেগুলো দূর করে পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার, যা করা গেলে বিশ্ব মহামারি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সংক্রমণ পরিস্থিতির একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাবে। পরীক্ষা বাড়ানোর জন্য জনসচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও পরামর্শ দেয় কমিটি।
কমিটি জানায়, হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবার পরিজনও সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছে। এ সভা মনে করে, স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পর কোয়ারান্টিনের উদ্দেশ্যে তাদের জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
একইসঙ্গে যেসব স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেছেন তাদের অনুদান প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সঠিক তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ের কাছে দাখিল করা প্রয়োজন।
কমিটি জানায়, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে, তাই এ সম্পর্কে আরও সচেতন করতে সবার সক্রিয় অংশ গ্রহণ ও নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা দরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাস্ক বিষয়ক ক্যাম্পেইন দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।