সূর্যের আলোর সাতরঙ মিলে যে রশ্মি, তা আমাদের চোখে ধরা পড়ে। এ রশ্মির তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য চারশ থেকে সাতশ ন্যানোমিটার। এগুলো থেকে আকারে বড় যেসব রশ্মি, অর্থাৎ লালের পরে যেগুলোর স্থান, তা চোখে দেখি না। এর নাম ইনফ্রা-রেড রশ্মি। এগুলো সৃষ্টি করে উত্তাপ। রোদে দাঁড়িয়ে থাকলে আমাদের যে গরম লাগে, তার কারণ এই ইনফ্রা-রেড রশ্মি। ইদানীং অনেকে এ রশ্মি ল্যাম্পে ব্যবহার করেন বা দেখে থাকবেন।
বাতব্যথা বা অন্য কারণে অনেকে এ রশ্মি নিয়ে থাকেন। এতে ত্বক বা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়। আসলে এ রশ্মি গরম সেঁকের মতো কাজ করে। আর চোখে দেখার রশ্মির চেয়ে তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ছোট যেগুলোর, অর্থাৎ বেগুনি রঙের নিচে যেটির নাম, তা হলো অতি-বেগুনি রশ্মি বা আলট্রা-ভায়োলেট রে। এটির তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য দুইশ নব্বই থেকে চারশ ন্যানোমিটার। আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মি তিনভাগে বিভক্ত। এগুলোর মধ্যে বড় হলো ইউভিএ।
তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য তিনশ বিশ থেকে চারশ ন্যানোমিটার। প্রখর রোদে ঘুরে এলে ত্বকে যে কালচে আভা দেখা যায়, তার জন্য দায়ী এ ইউভিএ। রোদে না বের হলে এ আভা ক্রমে মিলিয়ে যায়। অর্থাৎ এ রঙের পরিবর্তন ক্ষণস্থায়ী। ইউভিবি হলো এর পরের ধাপ। এটির তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য দুইশ আশি থেকে তিনশ কুড়ি ন্যানোমিটার। রোদে ঘুরে এলে ত্বক যে লালচে হয়ে যায়, তার পেছনে রয়েছে এ ইউভিবি।
দিনের পর দিন রোদে ঘুরলে ত্বক তামাটে বা কালচে বর্ণের হওয়ার জন্য দায়ী এ ইউভিবি। এ রঙের পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী। এটির নাম সানট্যান। দীর্ঘদিন রোদে কাটালে ত্বক বুড়িয়ে যায়। অনেক সময় ত্বকে ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দেয়। এসবের জন্য দায়ী ইউভিবি। এটির তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য দুশো থেকে আশি ন্যানোমিটার। পৃথিবীর আবহাওয়া ম-লে যে ওজোন স্তর আছে, তার বেশিরভাগ ইউভিসি শুষে নেয়, পৃথিবীপৃষ্ঠে পৌঁছতে দেয় না। এ ইউভিসি জীবাণুনাশক। অপারেশন থিয়েটার জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহার করা হয় ইউভিসি ল্যাম্প।
তবে এ রশ্মি কোনোভাবে চোখে লাগলে কনজাঙ্কটিভাইটিস বা ত্বকে সানবার্ন হতে পারে। মেঘের স্তর সূর্যের ইউভিবি রশ্মি আটকাতে পারে না। তবে জানলার কাচ এ রশ্মি পুরোপুরি আটকে দেয়। ধোঁয়া বা ধোঁয়াশা এ রশ্মি আটকাতে পারে। পাহাড়ের বরফ বা সমুদ্রধারের বালিতে প্রতিফলিত হয়ে ইউভিসি রশ্মি ত্বকে পৌঁছায়। তাই এসব স্থানে বেড়াতে গেলে ছাতা মাথায় দিয়ে বা মাথায় টুপি দিয়ে সূর্যরশ্মি আটকানো যেতে পারে কিছুটা, পুরোটা নয়।
সূর্যরশ্মির বিরুদ্ধে ত্বকের একটা সহ্যক্ষমতা জন্মে যায় অনেক সময়। এটা নির্ভর করে ত্বকে কতটা মেলানিন কণা আছে, তার ওপর। এ ছাড়া রোদে বেরোলে ত্বক কতটা মেলানিন তাড়াতাড়ি তৈরি করে ফেলতে পারবে, তার ওপরও নির্ভর করছে সূর্যরশ্মি রুখবার ক্ষমতা। একে বলে ‘ট্যান’ করার ক্ষমতা। তাই প্রখর রোদে বের হওয়ার আগে অবশ্যই ভেবেচিন্তে ব্যবস্থা নিয়ে তবেই বের হোন।
Like!! Thank you for publishing this awesome article.