কৃষক লীগের সম্মেলন আজ। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাঁকজমকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ সম্মেলন। তবে কমিটিবাণিজ্য, গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে অর্থের বিনিময়ে পদ দেয়া, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, কৃষকদের দুঃসময়ে পাশে না দাঁড়ানো, কৃষিসংশ্লিষ্ট লোকজনের পরিবর্তে ভিন্ন পেশার মানুষকে অগ্রাধিকার দিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগসহ নানা বিতর্ক মাথায় নিয়েই কৃষক লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে সম্মেলনের মঞ্চে উঠতে হচ্ছে। এসব অভিযোগের সুরাহা না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে একপ্রকার ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০১২ সালের ১৯ জুলাই সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল কৃষক লীগের। ওই সম্মেলনে মোতাহার হোসেন মোল্লাকে সভাপতি ও শামসুল হক রেজাকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর মেয়াদ হলেও ওই কমিটি সাত বছরের বেশি সময় পার করেছে। দীর্ঘ এ সময়ে তৃণমূলপর্যায়ের নেতাকর্মীদের তেমন খোঁজখবর নেননি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে পদবাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু দেশে নয়, যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাসহ অনেক দেশে কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজধানীতে কৃষক না থাকলেও গুলশান, বনানীসহ অভিজাত এলাকায় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দীর্ঘ সাত বছর পর সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে একপ্রকার আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। সম্মেলনস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের কাচারি ঘরের আদলেই তৈরি করা হয়েছে মূল মঞ্চ। ৯০ ফুট দীর্ঘ ও ৩০ ফুট প্রস্থ সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। কাউন্সিলর এবং অতিথি দিয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষের আয়োজনের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। সারিবদ্ধভাবে চেয়ার সাজানো হয়েছে। আলোকসজ্জায় সুসজ্জিত করা হয়েছে। মূল মঞ্চের বাম পাশে ‘দৃষ্টিনন্দন আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মডেলে সাজানো হয়েছে। সেখানে কৃষকের ছোট্ট ঘরের আঙিনায় কলাগাছ, লেবু, আমসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ দিয়ে সুন্দর আকৃতি দেয়া হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, কৃষক তার উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রি করছেন এমন দৃশ্য।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে স্থানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাড়ি থেকে নেমে মঞ্চে আসবেন, সে প্রবেশপথ তৈরি করা হয়েছে সবুজ ঘাসে। রাস্তার চার পাশে লাগানো হয়েছে বাঁশবাগান, ফলদ ও ঔষধি গাছ। প্রকৃতির এ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখলেই মন ভরে যায়। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে থাকছে উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ অতিথিদের বক্তব্য, সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশসহ অন্যান্য বিষয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয় অধিবেশনে থাকছে নেতৃত্ব নির্বাচন। আট হাজার কাউন্সিলর এবার তাদের নেতা নির্বাচনের লক্ষ্যে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ভোট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। কৃষকলীগের শীর্ষ নেতারা নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখছেন। গঠনতন্ত্রে আসছে কিছু পরিবর্তন। ১১১ সদস্যের কমিটির আকার ১৫১ করার চিন্তা রয়েছে। কিছু সম্পাদকমণ্ডলীর সংখ্যাও বাড়ছে।
সম্মেলন প্রস্তুতি সম্পর্কে কৃষক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা নয়া দিগন্তকে বলেন, সম্মেলনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আধুনিক সুসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। সম্মেলনের আয়োজন সবাই উপভোগ করার জন্য কয়েক জায়গায় বড় আকারের ডিসপ্লের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নেতৃত্ব নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কৃষক লীগের সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রশ্নাতীতভাবে নেত্রীকেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নেতৃত্ব নির্বাচন একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। আশা করি, এবার সম্মেলনের মাধ্যমে কৃষকবান্ধব নেতৃত্ব উঠে আসবে।
কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটু নয়া দিগন্তকে বলেন, সম্মেলনের পুরো প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। মূল মঞ্চ প্রস্তুতি, সাজসজ্জাসহ সব সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডেলিগেট এসেছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যান্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও থাকবেন। তিনি বলেন, দ্বিতীয় অধিবেশনে নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। এটা সম্পূর্ণ আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার। তিনি যাকেই দায়িত্ব দেবেন তিনিই কৃষক লীগের দায়িত্ব পালন করবেন।