একটাই দাবি- সাদা ঘরের চাবি চাই। ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেন (অন্য তিন প্রার্থীর কথা এখানে অপ্রাসঙ্গিক প্রায়) লড়ছেন হোয়াইট হাউসের জন্য। ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান নেতা চান ধারাবাহিকতা। আর অর্ধেক জীবন রাজনীতিতে কাটিয়ে দেওয়া ডেমোক্র্যাট নেতা এবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নেতৃত্ব প্রমাণের সুযোগ পেতে চান। দুজনেই মরিয়া। প্রচারযুদ্ধে কেউ কম যাননি। মুখোমুখি বিতর্কে লড়েছেন সেয়ানে-সেয়ান। এখন মূল লড়াই। আজ ভোটের চূড়ান্ত দিন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এবার সর্বোচ্চ ৯ কোটির
বেশি আগাম ভোট এরই মধ্যে পড়ে গেছে।
অন্যতম প্রতাপশালী রাষ্ট্রের এ নির্বাচনে পুরো বিশ্ব সাগ্রহে নজর রাখছে। ধনকুবের ট্রাম্প নাকি পুরনো গাড়ির বিক্রয়কর্মীর ছেলে বাইডেন- মার্কিনরা কাকে বেছে নেন, জানার জন্য সবাই যেন মুখিয়ে রয়েছে।
রাজনীতির মঞ্চে ‘অতিথি ও আগন্তুক’ ছিলেন যে ট্রাম্প, তিনি তো সব ঝড় সামলে ঠিকই চার বছর দেশ পরিচালনা (বলা ভালো, দেশ শাসন) করলেন, বিশ্বে মোড়লিও কম করেননি। কিন্তু সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে হারানো যত সহজ ছিল, এবার ঝানু রাজনীতিবিদ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়া বাইডেনকে হারানো কি ততটাই কঠিন নয়? সে উত্তর ব্যালটই দেবে, যদিও এরই মধ্যে ব্যালটচুরি, ভোট-জালিয়াতি নিয়ে সংশয়-সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মসনদে থাকা ট্রাম্প। এমনকি কথিত তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিবিদদের মতো, তিনি ‘দেশ বেচে’ দেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন বাইডেনের বিরুদ্ধে। সত্য কি মিথ্যা, সে ভবিষ্যতে দীর্ঘ তদন্তসাপেক্ষ, তবে এবার ভোটে রাশিয়া, ইরান ও চীন হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ষোলোর নির্বাচনে মস্কো মাতব্বরি করে অপকৌশলে ট্রাম্পকে জিতিয়ে দিয়েছিল, এই অভিযোগ তো ছিলই, তদন্তও হয়েছিল। অনুসন্ধানে আর যা-ই বেরিয়ে আসুক, আর যার যে-ই শাস্তি হোক না কেন, ট্রাম্প পাক্কা চার বছর কাটিয়ে দিচ্ছেন।
এবার মোট ভোটার ২৫ কোটির মতো। করোনা ভাইরাসের কারণে সংক্রমণ এড়াতে এবার আগাম ভোট বেশি পড়ছে। ৯ কোটি ভোটার তো ভোট দিয়েই ফেলেছেন। গতবার মোট পড়েছিল ১৪ কোটির কম। এবার অবশ্য দেশটির ১০০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতীয় জনমত জরিপগুলোয় বাইডেনই এগিয়ে রয়েছেন, শেষদিন পর্যন্ত। ট্রাম্পের সঙ্গে গড়ে ১০ পয়েন্ট ব্যবধানে তিনি এগিয়ে আছেন গত কয়েক মাস ধরেই। কিন্তু ট্রাম্প বলছেন, এসব সমীক্ষা ‘ভুয়া’।
অবশ্য জরিপই সব কথা নয়। অন্তত ষোলোর নির্বাচন থেকে আমরা জানি। সেবার জরিপে হিলারি এগিয়ে ছিলেন। আবার জনপ্রিয় ভোটেও ৩০ লাখ মতো ভোট বেশি পেয়েও সাবেক এই ফার্স্ট লেডি হেরে গিয়েছিলেন ট্রাম্পের কাছে। এর কারণ গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাজ্য (সুইং স্টেট) যেখানে ইলেকটোরাল ভোট বেশি। এবার এসব রাজ্যে দুই নেতার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
ভোটযুদ্ধ তো ব্যালটে হয়। প্রচারযুদ্ধ চলেছে কথায় আর ভাষণে। সরাসরি সমাবেশে কিংবা সামাজিক মাধ্যম বিশেষত টুইটারে দুই নেতাই ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন। বলা বাহুল্য, পরস্পরকে দোষারোপ করতেই তারা বেশি ব্যস্ত ছিলেন। উদাহরণ হিসেবে গতকাল দুই নেতা টুইটারে কী লিখেছিলেন, তার কিছুটা জানা যাক।
বাইডেন টুইট করেছেন, ‘জাতির জন্য তার প্রধান কর্তব্যই পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন আমাদের প্রেসিডেন্ট। আমাদের সুরক্ষা তিনি দিতে পারেননি। কিছুতেই ক্ষমা করা যায় না।’
বাইডেন আরেকটি টুইটে বলেন, ‘জাতির আত্মাকে বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমেছি আমরা। প্রচার শুরুর সময় এ কথা বলেছিলাম। আজ সে কথাটাই আরও জোর দিয়ে বলতে হচ্ছে। কিন্তু অবশ্যই মনে রাখবেন, এই যুদ্ধ অজেয় নয়, আমরা জিতবই।’
অন্যদিকে ট্রাম্প একটি টুইটে বলেন, ‘দাঙ্গাবাজ, লুটপাটকারী, জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনকারীদের প্রার্থী হচ্ছেন জো বাইডেন। আর আমি হলাম সব ধর্ম ও বর্ণ-গোত্রের চাষি, কারখানাকর্মী, পুলিশ, পরিশ্রমী ও আইনের অনুগত মানুষের প্রার্থী। মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন।’
অপর এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘সবাই কি ভুলতে বসেছে যে, ঘুমাচ্ছন্ন জো বাইডেন ও উগ্রবাদী বাম ডেমোক্র্যাটরা জিতলে তারা সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর সুবিধা হারাবে।’
নির্বাচনে হারলে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কিনা, এ নিয়ে সদুত্তর দেননি ট্রাম্প। তবে বুথফেরত জরিপে ‘এগিয়ে থাকার’ আভাস মিললেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করবেন বলে যে কথা ভাসছিল সংবাদমাধ্যমে, ট্রাম্প সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু তিনি যে পারলে ‘তৃতীয় মেয়াদে’ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে চান, সে বাসনার কথা এরই মধ্যে বহুবার বলেছেন, যদিও তা দেশটির সংবিধানসিদ্ধ নয়। সে হিসাব পরে, বিশের নির্বাচনে কে হাসে, কে উঠে বিষিয়ে- সেটাই দেখা যাক আগে। যেই জিতুন, তাকে অভিবাদন।