যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ কোটি নাগরিক আগাম ভোট দেওয়ার পর গতকাল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ সময় বিকাল চারটার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আর যখন শেষ হবে তখন আমাদের এখানে সকাল। সেই সময় থেকেই শুরু হবে নির্বাচনের ফলের জন্য অপেক্ষা- যেদিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব। এদিকে জয়ের ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন দুজনই প্রচ- আশাবাদী। ট্রাম্প বলেছেন, এবার তিনি গত নির্বাচনের তুলনায় বেশি ব্যবধানে জয়ী হবেন। অন্যদিকে বাইডেন বলেছেন- ট্রাম্পের এবার ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় হয়েছে।
বিশ্ব গণমাধ্যমে যেসব খবর এসেছে তাতে দেখা গেছে- বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। অনেকে লম্বা লাইন করে, অনেক সময় অপেক্ষা করে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ধারণা করা হয়েছিল, আগাম ভোট যেহেতু রেকর্ড ভেঙেছে, তাতে নির্বাচনের দিন হয়তো ভোটার উপস্থিতি কম হবে। কিন্তু সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভোট শুরুর প্রথম দিকেই সারিবদ্ধ ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। শুধু তাই নয়, ফ্লোরিডার একটি কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ৫০ জন ভোটার লাইন ধরে অপেক্ষা করছিলেন। একজন নিরাপত্তাকর্মী প্রশ্ন করলেন- এত আগে এসেছেন কেন? সারিবদ্ধদের মাঝ থেকে একজনের জবাব- ‘গণতন্ত্র স্থবির হয়ে আছে, সেই জন্য।’
এবার মার্কিন নির্বাচনের হাওয়া অন্যবারের তুলনায় বেশ আলাদা। এবার ক্ষমতাসীন ডোনাল্ড ট্রাম্প নজিরবিহীন চাপে রয়েছেন। করোনা মহামারীসহ বেশকিছু তার জন্য কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে নির্বাচনের ফল ঘোষণা নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়। পাশাপাশি রয়েছে সহিংসতার আশঙ্কাও। নির্বাচনের ফল আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে, সেই অনুমান আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এখন ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন ঐতিহ্য লঙ্ঘন করে পরাজিত প্রার্থী ফল নাও মেনে নিতে পারেন। পরিস্থিতি জটিল হতে পারে এই আশঙ্কায় গতকালই সাবেক দুজন অ্যাটর্নি জেনারেল ফল না-মানার ব্যাপারে হুশিয়ারি দিয়েছেন। তাদের একজন এরিক হোল্ডার, যিনি প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। অপরজন মাইকেল মাকাসি, যিনি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে। আর যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ বছরের ইতিহাসে এ বছর আগাম ভোট বেশি পড়েছে। এ কারণে ভোট গণনায় বিলম্ব হতে পারে। আর এখানেই গোল বাঁধাতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমন আভাস তিনি ধারাবাহিকভাবে দিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল টুইটারে তিনি বলেছেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্ত সহিংসতা উসকে দিতে পারে’। যদিও টুইটার তার এমন মন্তব্যে লেবেল সেঁটে দিয়েছে।
এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, অনেক রাজ্যে নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জনবহুল ক্যালিফোর্নিয়ায় নির্বাচনের দুইদিন আগে থেকেই দোকানপাটের সামনে আলাদা কাঠ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতেও একই চিত্র দেখা গেছে। বড় শহরের দোকানিরা শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমের ছবিতে সান ফ্রান্সিসকোতে একটি চীনা রেস্তোরাঁয় বাড়তি নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে দেখা গেছে।
নির্বাচনী জরিপের শেষ চিত্রেও দেখা গেছে বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন। তবে সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোয় এই ব্যবধান বেশ কম। গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে এই ব্যবধান মাত্র ২ দশমিক ৯ পয়েন্ট। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে- নির্বাচনের তারিখ যত ঘনিয়ে এসেছে, ট্রাম্পের পাল্লা তত ভারী হয়েছে। অর্থাৎ দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান কমেছে। তবে জরিপের ফল যে সব সময় সঠিক আভাস দেয় না, সেটি ২০১৬ সালের নির্বাচনে স্পষ্ট হয়েছে।
এবার নির্বাচনে বাইডেন যতটা প্রাসঙ্গিক, তার চেয়ে বেশি নজর থাকছে ট্রাম্প হারবেন নাকি জিতবেন- সেই দিকে। অর্থাৎ এ নির্বাচন ট্রাম্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বলে বাইডেনের জন্য বিষয়টি লঘু, তা মোটেও নয়। সব মিলিয়ে দুই প্রার্থীরই রয়েছে জয়ের অপার সম্ভাবনা; কিন্তু শেষ হাসি হাসবেন একজনই। কে সেই জন?