ইউরোপসহ বহির্বিশ্বে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী খাতগুলোয়। এর মধ্যে অনেক ক্রেতা ক্রয়াদেশ আপাতত স্থগিত রাখার পরামর্শ দিচ্ছে। আবার কিছু ক্রেতা তাদের আউটলেট বা দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার তথ্য মেইলে জানিয়ে দিচ্ছেন। ফলে রপ্তানি খাতে ফের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
দেশের পোশাক ও চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাতটিতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব মধ্য নভেম্বরে স্পষ্ট বোঝা যাবে। তবে অক্টোবরের মতো আগামী মার্চ পর্যন্ত পোশাক রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রবণতা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
করোনার প্রভাবে গত মার্চ থেকে পোশাক খাতের রপ্তানি কমতে শুরু করে। এপ্রিলে যা ভয়াবহ রূপ নেয় এবং মে মাসেও তা অব্যাহত ছিল। তবে জুন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে পোশাক খাত। এর ধারাবাহিকতা জুলাই, আগস্ট এমনকি সেপ্টেম্বরেও অব্যাহত ছিল। তবে অক্টোবর শেষে এ খাতের আয় হোঁচট খায়। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। ইপিবির তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ৪৫ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতের আয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, চলতি বছরের মার্চে ২২৫ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ কম। এপ্রিলে ৩৭ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৫ শতাংশ কম। যদিও মে মাসে এ আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১২৩ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু সেটাও আগের বছরের চেয়ে ৬২ শতাংশ কম। চলতি বছরের জুনে এ আয় বেড়ে ২২৪ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তার পরও পোশাক রপ্তানি আগের বছরের চেয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে। জুন মাসে এ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশের মতো।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সিনিয়র সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ফলে কিছু শিপমেন্ট পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্যাশফ্লোতে একটা প্রভাব পড়বে। এ জন্য আমরা প্রণোদনার অর্থ পরিশোধে সময় বাড়ানোর আবেদন করেছি। কারণ রপ্তানি তো পিছিয়ে যাচ্ছে। রপ্তানি করেই তো আমরা আয় করি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সেকেন্ড ওয়েবের কারণে নতুন করে অর্ডার স্থগিত হচ্ছে। ফলে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কিছু বায়ার এরই মধ্যে মেইল দিয়ে বলেছে, যেসব অর্ডারের ফেব্রিক এখনো কারখানায় যায়নি সেই কাজ বন্ধ রাখতে। আবার কোনো কোনো বায়ার জানিয়েছে, তাদের স্টোরগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে তারা নতুন অর্ডার স্থগিত রাখার কথা কৌশলে জানাচ্ছে।