জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে সহজে ক্ষমতা হস্তান্তর করছেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নির্বাচন-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বেসরকারি ফলাফল প্রকাশের পর এখনো পর্যন্ত ট্রাম্পের নিজের পরাজয় মেনে না নেয়া, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বক্তব্য প্রদান করা, ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আইনি লড়াইয়ে যাওয়া এবং সর্বশেষ জো বাইডেনের ’ট্রানজিশন টিমকে’ অর্থ ছাড় না দেয়ায় পুরো পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী রেওয়াজ অনুযায়ী পরাজিত প্রার্থী বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি ফলাফল মেনে নিয়ে জনসমাবেশে বক্তব্য রাখেন। আর ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বিজয়ী প্রেসিডেন্টকে টেলিফোনে অভিবাদন এবং দ্রুত তাকে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ব্রিফিং করেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি ফার্স্ট লেডিকেও হোয়াইট হাউজে বিভিন্ন রীতিনীতির বিষয়ে ব্রিফ করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার চার দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
পক্ষান্তরে নির্বাচন নিয়ে একের পর এক টুইট করে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই প্রথাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে এবার যোগ হলো ট্রানজিশন টিমকে কাজের পরিবেশ না করে দেয়া। অভিযোগ উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের জেনারেল সার্ভিস এডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান এমিলি মার্ফির বিরুদ্ধে। যিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরাসরি নিয়োগ করা কর্মকর্তা। তার দায়িত্ব হচ্ছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কাছে সুচারুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি তদারকি করা। অথচ তিনি ইতোমধ্যে ট্রানজিশন গভর্নমেন্টকে সহযোগিতা ও অর্থছাড়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজের একটি বড় অংশ হলো যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন তিনি যাতে শপথ গ্রহণের পরপরই পুরোদমে কাজে নেমে পড়তে পারেন সেই লক্ষ্যে নির্বাচিত হবার পর থেকে শপথ গ্রহণ সময় পর্যন্ত একটি ক্ষমতা হস্তান্তর টিম গঠিত হয়। নতুন প্রেসিডেন্ট তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা আসবেন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধান হিসেবে তিনি কাকে নিয়ে কাজ করবেন, প্রথম তিন মাসে তিনি কোন কোন ইস্যুতে কাজ করবেন তা নিয়ে অত্যন্ত প্রফেশনালি একটি গ্রুপ কাজ করে। আর এ কাজের জন্য প্রয়োজন এক বিরাট অঙ্কের অর্থের। কারণ ট্রানিজিশন টিম প্রায় আড়াই মাস ধরে এ কাজটি করবে।
পাশাপাশি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তায় সিক্রেট সার্ভিসকে কাজ করতে হয়। তাদের থাকা খাওয়া ও যাতায়াতের খরচাদি ওই ফান্ড থেকে আসে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জেনারেল সার্ভিস এডমিনিস্ট্রেশনের মুখপাত্র পামেলা ওয়াশিংটন পোস্টেকে জানান, বিষয়টি এখনো তদন্ত করা হয়নি, প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই আইন ও নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে।
এদিকে জো বাইডেনের এক মুখপাত্র বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে সম্মান করবে, পাশাপাশি একটি মসৃণ ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে জড়িত থাকবে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০০০ সালের মতো এবারো ট্রানজিশন টিমকে দেরিতে কাজ শুরু করতে হবে। এদিকে সরকারি সহযোগিতার দিকে না তাকিয়ে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় পরবর্তী কৌশল নির্ধারণে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশেষজ্ঞদের সাথে সোমবার বৈঠক করেছেন ও ২২ সদস্য বিশিষ্ট একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত হতে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। তার মধ্যে ভোটের ফলাফল চূড়ান্ত কথা নয়। কারণ আগামী ১৪ জানুয়ারি ইলেক্টরাল কলেজের ভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। ২০ জানুয়ারি ২০২১ নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করবেন ও আনুষ্ঠানিক দায়িত্বগ্রহণ করবেন। বিজয়ী অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রত্যেক প্রতিনিধি জো বাইডেনকেই প্রথা অনুযায়ী ভোট দেবেন তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টরাল প্রতিনিধিদের ভোটে যদি বিষয়টি সমাধান না হয় তাহলে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন। সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি সহসাই ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় না এগিয়ে আসে নতুন প্রেসিডেন্ট ও তার সরকার জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে বিরাট ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।