রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ পূর্বাহ্ন

সংসদে রাঙাকে তুলাধুনা, বহিস্কারের দাবি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৯
  • ২৯২ বার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে কটূক্তিপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সংসদের বিরোধীদলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙাকে তুলাধুনা করেছেন সংসদের সিনিয়র সদস্যরা। একইসাথে তাকে জাতীয় পার্টি ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ পদ থেকে বহিষ্কার এবং তার এই ধরনের কটূক্তিতে জাতীয় পার্টির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তারা রাঙার ওই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং রাঙ্গাকে দুঃখ প্রকাশ ও সংসদে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এ দাবি জানান সংসদ সদস্যরা। আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সিনিয়র সদস্যরাও তাকে তুলাধুনা করেন। রাঙা কীভাবে সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব হলো, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলের তার দলের সংসদ সদস্যরা। এক অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন- আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তাহজীব আলম সিদ্দীকি, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, মুজিবুল হক চুন্নু, গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। এসময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।

পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এই প্রসঙ্গের সূত্রপাত করে তাহজীব আলম সিদ্দীকি বলেন, নূর হোসেন দিবসে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে কটূক্তিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন মশিউর রহমান রাঙ্গা। নূর হোসেনকে হত্যার পর সারাদেশের আনাচে কানাচে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সেই নূর হোসেনকে নিয়ে অপমানজনক বক্তব্যের প্রতিকার চাই। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতিও দিতে হবে।

এরপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাঙ্গা এমন একটি বক্তব্য দিয়েছেন, যেটাতে বাংলার মানুষের হৃদয়ে আঘাত লেগেছে। নূর হোসেন হত্যার ঘটনার পর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বেগবান হয় এবং মানুষ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। আমি অবাক হলাম রাঙ্গা বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নূর হোসেনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। অথচ রাঙ্গা ভুলে গেছেন এরশাদও নূর হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তার মা-বাবার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল, সংসদে ক্ষমা চেয়েছিল। রাঙ্গা তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। তার এই বক্তব্যের ধিক্কার জানাই। তিনি বলেন, এরশাদের বক্তব্যের জন্য আমরা প্রশংসা করেছিলাম। কিন্তু রাঙ্গার বক্তব্যের কারণে সারাদেশে স্বৈরাচার শব্দটি উচ্চারণ হচ্ছে। রাঙ্গা যে বক্তব্য দিয়েছেন, এর জন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি যে এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, সেই এলাকায় আওয়ামী লীগ তার সঙ্গে না থাকলে নির্বাচিত হতে পারতেন কিনা সেটা আমরা বলতে চাই না। রাঙ্গা খুবই খারাপ বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার বক্তব্যে ঘৃণা প্রকাশ করি। সবাই এখন স্বৈরাচারী এরশাদ বলছে। একজন সুস্থ্য মানুষ, তিনি যদি স্বাভাবিক থাকেন তার পক্ষে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও নূর হোসেনকে নিয়ে এই বক্তব্য দেয়া সম্ভব নয়।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। রাঙ্গা সেই চেষ্টা করেছেন। নূর হোসেন যখন হত্যা হয়, তখন দেশে ফেনসিডিল-ইয়াবা ছিল না। ভোট ডাকাতি, মিডিয়া ক্যু’র কথা বলা হয়। এই ভোট ডাকাতি-মিডিয়া ক্যু’র মূলহোতা ছিল এরশাদ। আজ সেটাকে ঢাকার জন্য রাঙ্গা এত বড় দুঃসাহস দেখাতে পারে না। এরশাদের সময় রাজনৈতিক নেতাদেরকে নির্যাতন ও পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরশাদকে শুধু আওয়ামী লীগ স্বৈরাচার বলে না, সারাদেশের মানুষ তাকে স্বৈরাচার বলে অভিহিত করেছে। বিশ্বে স্বৈরাচার বলে পরিচিতি পেয়েছে। রাঙ্গাকে অবশ্যই তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, রাঙ্গা যেকথা বলেছেন, এটা কোনো সুস্থ মানুষ বলতে পারে না। বঙ্গবন্ধু সর্ম্পকে কথা বলার আগে তার চিন্তা করা দরকার ছিল। রাঙ্গার এই বক্তব্য গণতন্ত্রের ওপর আঘাত করেছে। তাকে শুধু ক্ষমা চাইলেই হবে না, জাতীয় পার্টিকেও তার এই বক্তব্যের ক্লারিফিকেশন দিতে হবে।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, নূর হোসেনকে নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলেছেন রাঙ্গা। কথায় আছে ‘রতনে রতন চেনে….’। আমি বাকি কথাটা আর বললাম না। যে নূর হোসেনকে সামনে রেখে আমরা আন্দোলন করেছি। তাকে তিনি কটাক্ষ করেছেন। এটা করে তিনি সংসদকে অপমান করেছেন। কারণ স্বৈরাচারের পতন না হলে তিনি সংসদে এসে বসতে পারতেন না। একথা বলে তিনি প্রমাণ করেছেন, স্বৈরাচার, দালালদের চরিত্র পরিবর্তন হয় না। এর জন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।

নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, মনে হয় রাঙ্গা শুধু নূর হোসেনের বিরুদ্ধে নয়, দেশের স্বাধীনতা, সংসদ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্রের ধারাকে অপমান করেছেন। তার এই বক্তব্যের জন্য যদি জাতীয় পার্টি কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে জাতীয় পার্টি আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। রাঙ্গাকে ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি ক্ষমা না চাইলে জাতীয় পার্টি থেকে তাকে বহিষ্কার করতে হবে।

রাঙ্গার বক্তব্য নিয়ে সংসদে কড়া সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বান্দরকে লাই দিলে গাছের মাথায় ওঠে। আমি যতদিন রাজনীতি করি ততদিন ওর (মসিউর রহমান রাঙ্গা) বয়সও না। ও এই ধৃষ্টতা দেখায় কিভাবে, এই দুঃসাহক কিভাবে পেল? এই সংসদই তাকে লাই দিয়েছে। যাদের অতীত নাই, বর্তমানে কিছুই ছিল না। হঠাৎ তাকে মন্ত্রী বানানো হলো, একটার পর একটা প্রমোশন দেয়া হলো। আমরা তো তাজ্জব হয়ে গেলাম। এগুলো আমরা দেইনি। এই সংসদে সে চিফ হুইপ। আমি একদিন বললাম তাজুল ইসলাম চৌধুরী মারা গেছেন, তার বিষয়ে বক্তব্য রাখব। সে বলে আপনি দেবেন, আমি কেন নাম পাঠাব। এই ধৃষ্টতা সে দেখাতে পারে। সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা সম্পর্কে বক্তব্য হয়েছে। তার বক্তব্য আমি শুনেছি, আমি সেদিন সভায় ছিলাম না। পরে এটা ভাইরাল হয়ে গেছে। এই বক্তব্য জাতীয় পার্টির বক্তব্য না। এটা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য হতে পারে না। এটা রাঙ্গার নিজস্ব বক্তব্য হতে পারে। এই বক্তব্যের জন্য জাতীয় পার্টি লজ্জিত। আমরা দুঃখিত এবং অপমানিত অনুভব করছি।

ফিরোজ রশীদ বলেন, কোথায় আন্দোলন করেছে? কোথায় সংগ্রাম করেছে? সে করেছে যুবদল। শুধু তাই না প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কেও সে কথা বলেছে। সে গণতন্ত্রের ছবক দেয়। যে লেখাপড়া করে নাই, রাতারাতি কাগজের মালা গলায় দিয়ে পরিবহনে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে হঠাৎ করে এখানে এসে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে গেছে। সে এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখায়। আর তার জবাব দিতে আজ সংসদে দাঁড়াতে হয়। আজকে খুব লজ্জিত। এটা সম্পূর্ণ আমাদের ঘাঁড়ে এসে পড়েছে। আমরা দুঃখিত। নূর হোসেনের গায়ে লেখাটা ছিল একটা পোস্টার। সারা বিশ্বের লোক দেখেছে। এটা ছিল তার মনের কথা। তিনি বলেন, নূর হোসেন ’৯০-তে তার জীবন দিয়ে গেছেন। যে যুবক গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিতে পারেন, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারেন সেই সাহসী যুবকের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। আমরা কখনো এই ধরনের ধৃষ্টতা দেখাইনি। এই ধরনের অপমানজনক কথা কখনো বলিনি। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার বক্তব্য হতে পারে না।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এটা রাঙ্গার ব্যক্তিগত বক্তব্য। জাতীয় পার্টি দলীয়ভাবে এটা সমর্থণ করে না। এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত বক্তব্য । তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা তিনি নিজেই দেবেন। তিনি বলেন, নূর হোসেন মারা যাওয়ার পর তার বাসায় গিয়ে আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দু:খ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া নূর হোসেনের পরিবারকে সাহায্য করেছেন। আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com