‘হয় তাকে হটাও, নইলে আমরাই গদিচ্যুত করব।’ যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ ভবনে হঠাৎ দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে এমন হুশিয়ারি দিয়েছে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাট। মাত্র ১২ দিনের তফাতে অবশ্য ডেমোক্র্যাটরাই দেশটির শাসনভার পাচ্ছে; নির্বাচনে পরাজিত ট্রাম্পকে ক্ষমতা ছাড়তে হচ্ছে ২০ জানুয়ারি। কিন্তু এ বিদায়বেলাতেও বিতর্কিত এই নেতাকে ‘চূড়ান্ত লজ্জা’য় নিমজ্জিত হতে হচ্ছে, অবশ্য সেই লজ্জাবোধ যদি তার থেকে থাকে। কারণ, ক্যাপিটলে দাঙ্গায় উগ্র সমর্থকদের উসকানিতে ট্রাম্পের মদদ ছিল, এ কথা স্পষ্ট।
বুধবারের ওই তাণ্ডবের ঘটনায় অন্তত পাঁচজন মারা গেছে। বিবিসি, সিএনএন, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও দি ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতারা ট্রাম্পতে পদত্যাগ করতে বলছেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পকে সরিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তবে পেন্সের এক উপদেষ্টা বলেছেন, ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের বিরোধিতা করেছেন পেন্স।
পেলোসি ট্রাম্পকে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলেও জানিয়েছেন। ওদিকে ট্রাম্পকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে প্রখ্যাত মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এমনকি নভেম্বরে যারা তাকে ভোট দিয়েছেন, সেই সমর্থকরা পর্যন্ত বলেছেন, ক্যাপিটলে হামলা ‘অনেক বড় লজ্জা’।
২০২০ সালের ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। ইলেকটোরাল কলেজে ২৩২-৩০৬ ভোটে হেরে গেছেন ক্ষমতাসীন নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি ৭৮ বছর বয়সী রাজনীতিক জো বাইডেনের চেয়ে ৭০ লাখেরও বেশি জনপ্রিয় ভোট কম পেয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই হার মানতে রাজি ছিলেন না ট্রাম্প। অন্তত ক্যাপিটলে হামলা হওয়ার আগ পর্যন্ত। এখন অবশ্য তিনি বলছেন, ক্ষমতা শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তর করবেন। গতকাল তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘২০ জানুয়ারি সম্পূর্ণ নতুন এক মন্ত্রিসভা শপথ নেবে’। এমনকি চাপে পড়ে সমর্থকদের হামলাকে ‘ঘৃণ্য’ বলেও নিন্দা করছেন। যেন ‘ভূতের মুখে রাম নাম’।
এরই মধ্যে ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে শীর্ষ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করা শুরু করেছেন। ক্যাপিটল হিলের শীর্ষ তিন নিরাপত্তা কর্মকর্তা পদত্যাগের পর সিনেটের সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্ম পদত্যাগ করেছেন। এর পর মন্ত্রিসভা থেকে প্রথমে পরিবহনমন্ত্রী এলাইন চাও এবং পরে শিক্ষামন্ত্রী বেৎসি ডিভোস পদত্যাগ করেন।
তবে ট্রাম্প যে পদত্যাগ করবেন না, তা বলাই বাহুল্য। ক্ষমতার শেষ লহমা পর্যন্ত তিনি মসনদে থাকবেন। এমনকি ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে নিজেকে ক্ষমা করার কথাও ভাবছেন এ ধনকুবের নেতা। গতকালের ভিডিওবার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আমার সারা জীবনের সেরা অর্জন।’
কিন্তু ক্ষমতা ছাড়ার দুই সপ্তাহেরও কম সময় আগে সংসদ ভবনে দাঙ্গার ঘটনা ট্রাম্পের জন্য আরও বেশি বিতর্কের ও বিপাকের। আবার এমন এক ঘোর বিপাকের সময় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের আদেশ দিয়েছেন ইরাকের একটি আদালত। আলজাজিরা জানিয়েছে, মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত ইরাকি কমান্ডার আবু মেহদি আল মুহানদিসকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিদায় তো ট্রাম্পকে নিতেই হবে। অন্তত ২০ জানুয়ারিতে তো বটেই। কিন্তু এ বিদায় কতটা ‘সম্মানজনক প্রস্থান’ হবে, সেটাই দেখার বিষয়।