মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫০ অপরাহ্ন

দ্বিতীয়বার অভিশংসিত ট্রাম্প

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২১
  • ১৭০ বার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসন করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোররাত) যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ২৩২-১৯৭ ভোটে ট্রাম্পকে অভিশংসনের (ইমপিচমেন্ট) প্রস্তাব পাস হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম দ্বিতীয়বার কোনো রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা হলো।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ৪৩৫ সদস্যের প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটি ২৩২-১৯৭ ভোটে পাস হয়। সহিংস বিদ্রোহে উসকানি দেওয়ার জন্য দায়ী করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রস্তাবটি পাস হয়। এর ফলে কংগ্রেস ভবনে কলঙ্কজনক হামলার পর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অসম্মানজনকভাবে বিদায় করতে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা।

ডেমোক্রেটিক পার্টির আনা ওই প্রস্তাবে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টিরও সমর্থন মেলে। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে লিজ চেনিসহ ১০ জন রিপাবলিকান নেতা ভোট দেন ডেমোক্র্যাটদের আনা এই প্রস্তাবে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়া ট্রাম্প আর মাত্র এক সপ্তাহ হোয়াইট হাউজে রয়েছেন। তবে এই ভোটের মধ্য দিয়ে নতুন এক নজির গড়লেন তিনি, সেটা অসম্মানের। তিনিই প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি দুই বার প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হলেন।

সিএনএন জানায়, সাম্প্রতিক হামলার অভিজ্ঞতায় ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে ক্যাপিটল ভবনে শুরু হয় প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশন। ভবনের ভেতর-বাইরে গিজগিজ করছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। দেড়শ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের পর ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা এই প্রথম কংগ্রেস ভবনের ভেতরে অবস্থান নেন নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজনে। ভোটাভুটির আগে কয়েক ঘণ্টা উত্তপ্ত বিতর্ক চলে প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশনে।

প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ‘ইতিহাসকে এড়িয়ে যেতে আমরা পারি না। আমরা দেখেছি, প্রেসিডেন্ট দাঙ্গায়, সশস্ত্র বিদ্রোহে উসকানি দিয়েছেন। তাকে (ট্রাম্প) যেতেই হবে। তিনি জাতির জন্য স্পষ্ট ও জাজ্বল্যমান এক হুমকি।’

এর বিরোধিতায় রিপাবলিকান নেতারা এই অভিশংসন প্রস্তাবকে ডেমোক্র্যাটদের বাড়াবাড়ি বলে মন্তব্য করেন। তারা বলেন, সহিংসতা নিয়ে এখন উচ্চকণ্ঠ হলেও সম্প্রতি বর্ণ বিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা সহিংস বিক্ষোভ করলেও তখন ডেমোক্র্যাটদের কোনো বক্তব্য ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদ্রোহ, ঘুষ নেওয়া কিংবা অপরাধমূলক কোনো কাজে জড়িত হলে তাকে সরানোর অস্ত্র এই অভিশংসন। তাহলে কি মেয়াদ ফুরোনোর আগেই ট্রাম্পকে বিদায় নিতেই হচ্ছে? সেই প্রশ্নের উত্তর এখনই মিলছে না।

প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া এই প্রস্তাব যাবে এখন কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সেনেটে শুনানিতে। ১০০ সদস্যের সেনেটে এখন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সমান সমান। সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য সম্মতি দিলে তবেই ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে বাধ্য হবেন। আর সেই প্রক্রিয়া সারতে যদি ২০ জানুয়ারি পেরিয়ে যায়, তবে এবার কিছু না হলেও ভবিষ্যতে আর কখনো প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে বুধবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাবে ভোটগ্রহণ হয়। এক মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের পর এবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হারেন এই ধনকুবের। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ২০২০ সালে একবার প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন। তবে সে দফায় সেনেটে ভোটাভুটিতে তার পদ রক্ষা হয়।

এবার গত নভেম্বরে ভোটের পর হার স্বীকার না করে উল্টো কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার দৃষ্টিকটূ প্রয়াস চালান ট্রাম্প। তার ধারাবাহিকতায় গত ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে জো বাইডেনের বিজয়ের স্বীকৃতি দেওয়ার দিনে বিক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনে নজিরবিহীন হামলা চালায়। ওই ঘটনায় নিহত হয় পাঁচজন।

ওই হামলার ঠিক আগেই ট্রাম্প তার সমর্থকদের উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তাতে উগ্রতার প্ররোচনা ছিল বলে সব মহল থেকে সমালোচনা ওঠে। রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতাও এর সমালোচনায় ‍মুখর হন। এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালনের ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করে ট্রাম্পের হাত থেকে ক্ষমতা নিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের প্রতি আহ্বান জানায় কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট সদস্যরা। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সকে।

২৫তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট যদি শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে ‘অপারগ’ হন, তাহলে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন। ওই সংশোধনীর ৪ নম্বর ধারায় বলা আছে, প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না পারলে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য তাকে ‘দায়িত্ব পালনে অপারগ’ ঘোষণা করতে পারেন।

কিন্তু পেন্স সেই আবেদনে সাড়া না দিলে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের প্রস্তাব আনার পথে হাঁটেন ডেমোক্র্যাট নেতারা। তবে এর মধ্যে ট্রাম্প এক বিবৃতিতে তার সমর্থকদের সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানান বলে জানিয়েছে বিবিসি।

তবে প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান পার্টির যে ক’জন সদস্য ট্রাম্পকে অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন, তারা দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলে জানিয়েছে নি ইয়র্ক টাইমস। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা স্টেনি হয়ার যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরাতে কংগ্রেসকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

তবে সেনেটে রিপাবলিকানদের নেতা মিচ ম্যাককনেল প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ট্রাম্পকে সরাতে অভিসংশন নিয়ে সেনেটের জরুরি অধিবেশন ডাকার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে। তার মানে দাঁড়ায়, বিদায়ের আগে ট্রাম্পের পদ হারানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ অর্থাৎ ভবিষ্যতে যাই হোক না কেন, এই দফায় মেয়াদ পূর্ণ করতেই যাচ্ছেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com