সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি তাদের স্বর্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ১৯৭৭ সালে বেছে নেয় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। তারপর দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তাকে গড়ে তুলেছে তারা। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব হয়েছে কখনো ট্রাম্পের অজান্তে, আবার কখনো তার জ্ঞাতসারেই। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির এই চেষ্টার চূড়ান্ত ফল আসে ৪০ বছর পর, ২০১৬ সালে। ওই বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন ট্রাম্প। রাশিয়ার সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইউরি শভেৎসের দাবি, ট্রাম্পের এই বিজয়ে মস্কোয় উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছিল।
গত শতকের আশির দশকে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস–এর প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ছিলেন ইউরি শভেৎস। আসলে এটি ছিল তার ছদ্মবেশ। তিনি মূলত কেজিবির হয়ে কাজ করতেন, ছিলেন সংস্থাটির মেজর। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস করেন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯৩ সালে তিনি স্থায়ীভাবে দেশটিতে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও পান তিনি। ৬৭ বছর বয়সী ইউরি শভেৎস বর্তমানে বাণিজ্যিক নিরাপত্তা তদন্তকারী হিসেবে কাজ করছেন। ইউরির বরাত দিয়ে মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক ক্রেগ আঙ্গার লিখেছেন একটি বই, নাম আমেরিকান কমপ্রোম্যাট। বইটিতে উঠে এসেছে ট্রাম্পের এই হাঁড়ির খবর।
ভার্জিনিয়া থেকে টেলিফোনে ইউরি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেন, কেজিবি গোয়েন্দাদের একটি কৌশল ছিল সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী অথবা তরুণদের লক্ষ্যবস্তু বানানো। একসময় এই তরুণেরাই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছান। ট্রাম্পের বিষয়টি এই কৌশলেরই একটি উদাহরণ।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৯৮৭ সালে ট্রাম্প ও ইভানা প্রথমবারের মতো মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গ ভ্রমণ করেন। ইউরি শভেৎসের দাবি, সেখানে কেজিবির গোয়েন্দাদের কথার জাদুতে মজে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। এই গোয়েন্দারাই প্রথম তার মাথায় রাজনীতির বুদ্ধিটা ঢুকিয়ে দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কেজিবির এই খেলায় ট্রাম্প এতটাই মজে গিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেই রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা শুরু করলেন। এমনকি নিউ হ্যাম্পশায়ারে পোর্টসমাউথে তিনি একটি সমাবেশও করলেন। ১৯৮৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ও বোস্টন গ্লোব–এর মতো সংবাদপত্রে পুরো পাতায় বিজ্ঞাপন দিলেন।
ওই বিজ্ঞাপন প্রকাশের কিছুদিন পর কেজিবির সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইউরি শভেৎস দেশে ফিরে যান। এর পরপরই তিনি কেজিবির ফার্স্ট চিফ ডিরেক্টরেটের সদর দপ্তরে যান। বিদেশের মাটিতে গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের দায়িত্ব ছিল এই দপ্তরের ওপর। সেখানেই ইউরি একটি গোপন তারবার্তা পান, যাতে ট্রাম্পের বিজ্ঞাপন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়।