মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন

নামাজ কেন ব্যর্থ হয়?

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৯ মার্চ, ২০২১
  • ২২০ বার

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই সালাত মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে’ (সূরা আনকাবুত-৪৫)। একদা রাসূলুল্লাহ সা: সাহাবিদের নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, ‘যদি তোমাদের কারো বাড়ির দরজায় একটি প্রবাহিত নদী থাকে, যার মধ্যে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে। তাহলে তার দেহে কোনো ময়লা বাকি থাকবে কি?’

সাহাবিরা রা: বললেন, তার গায়ে কোনো ময়লা বাকি থাকবে না। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘এটাই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ যা দ্বারা যাবতীয় গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়’(বুখারি, মুসলিম)। অন্য হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, ‘মুমিন ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণের মাধ্যম হচ্ছে সালাত।’ কুরআন-হাদিসে সালাতের হাকিকত সম্পর্কে অনেক মূল্যবান নির্দেশনা রয়েছে। এসব থেকে বোঝা যায়, নিয়মিত সালাত আদায়কারী যেকোনো অশ্লীল, অন্যায় ও মন্দকাজ থেকে নিজেকে অনায়াসেই বিরত রাখতে সক্ষম।

বস্তুত, আমরা অনেক সময় এর বিপরীত চিত্র দেখতে পাই। অর্থাৎ এমন অনেক সালাত আদায়কারীকে দেখা যায় যিনি, কবিরা গুনাহ, হারামসহ অনেক অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজে জড়িত। তার দ্বারা অনেক অসামাজিক কাজ সংঘটিত হচ্ছে। শরিয়তের ফরজ-ওয়াজিব লঙ্ঘিত হচ্ছে। কিন্তু এমনটা কেন? সমাধান কী? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? কুরআনের ঘোষণা যেহেতু সালাত মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে সেহেতু নিয়মিত সালাত আদায়কারী যদি অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ে তাহলে বুঝতে হবে তার সালাতে কোনো ত্রুটি আছে! তার সালাত আল্লাহর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে যাচ্ছে! সালাত ব্যর্থ হওয়া বা কবুল না হওয়ার পেছনে কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে যে কারণগুলো পরিলক্ষিত হয় তা হলো-

নামাজ একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে না হওয়া : ইবাদতের প্রধান শর্তই হলো তা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে হতে হবে। নচেৎ তা ইবাদত হিসেবেই গণ্য হবে না। তাই, ইবাদত করতে হবে একনিষ্ঠ নিয়তে, মনে-প্রাণে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহর ঘোষণাÑ ‘আমি (আল্লাহ) জ্বিন ও মানবজাতিকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’ (সূরা আয-জারিয়াত-৫৬)। বান্দার সালাত আদায় যেন একমাত্র আল্লাহ সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে না হলে তা অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখতেও সক্ষম হবে না।

সুন্নত তরিকা অনুসরণ না করা : যেকোনো ইবাদত (ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব, নফল, ফরজে কিফায়া)। পালনের ক্ষেত্রে রাসূল সা: প্রদর্শিত সুন্নত তরিকা অনুসরণ করা অবশ্যই কর্তব্য। নচেৎ আল্লাহ তা কবুল করবেন না। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যেভাবে তোমরা আমাকে দেখেছ সালাত আদায় করতে সেভাবে সালাত আদায় করো।’ হাদিসের স্পষ্ট ঘোষণা হচ্ছেÑ সুন্নত তরিকাবিহীন সালাত আদায় কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। সুন্নত পদ্ধতি মেনে সালাত আদায় করলে সে সালাত আল্লাহর কাছে গ্রহণীয়।
খুশু-খুজু না থাকা : ‘খুশু-খুজু’ শব্দদ্বয় আরবি, অর্থ হচ্ছে বিনয়-নম্রতা। নামাজে বিনয়-নম্রতা প্রদর্শন আল্লাহর প্রতি ভয় জাগ্রত করে দেয় এবং সালাতে যথাযথ মনোযোগ আনয়নে সহায়তা করে। আর যে সালাতে পূর্ণ মনোযোগ থাকে না, সে সালাত পরিপূর্ণ হকসহ আদায় হয় না। তাই এ জাতীয় সালাত দিয়ে অন্যায়, অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ।

হালাল রুজি ভক্ষণ না করা : যেকোনো ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল রুজি ভক্ষণ করা। হাদিসে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘হালাল রিজিক অন্বেষণ করা ফরজের (ইবাদতের) পর আরেকটি ফরজ’ (ইবাদত)। হালাল রুজি ভক্ষণ না করার কারণে বান্দার সালাত আল্লাহর কাছে কবুল হচ্ছে না। আর এ ধরনের সালাত আদায়কারী নিজেকে অন্যায় কাজ থেকেও বিরত রাখতে সক্ষম নয়।

নিছক দায়বদ্ধতা মনে করা : সালাতকে রুটিনমাফিক নিছক দায়বদ্ধতা মনে করে শৈথিল্য প্রদর্শনপূর্বক আদায় করা হলে সে সালাত প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে। আর তাতে মুনাফিকের লক্ষণও চলে আসে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে; বস্তুত তিনি তাহাদেরকে উহার শাস্তি দেন, আর যখন তাহারা সালাতে দাঁড়ায়- কেবল লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তাহারা অল্পই স্মরণ করে’ (সূরা নিসা-১৪২)। এ ধরনের সালাত আদায়কারী নিজেকে অন্যায় ও মন্দকাজ থেকে কতটুকু বিরত রাখতে সক্ষম হবে? কারণ এ সালাত আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার শামিল।

লোক দেখানো ইবাদত করা : লোক দেখানো ইবাদত আল্লাহ কবুল করবেন না। যারা লোক দেখানো ইবাদত করে তাদের জন্য ধ্বংস। তারা ইহকালেও ব্যর্থ পরকালেও তারা ব্যর্থ হবে। সূরা মাউনে চমৎকারভাবে এ দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের, যারা তাহাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য উহা করে’(সূরা মাউন-৪-৬)।

অনেক সময় আমরা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করি। নির্বাচনে প্রার্থী হলে, ছেলের মেয়ের বিয়ের দিনে অর্থাৎ বিশেষ বিশেষ দিনে বিশেষ কারণে সালাত পড়ি। এটা যদি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে হয় তাহলে তা কবুল হবেই না।

দুনিয়াবি স্বার্থ, উদ্দেশ্য বাদ দিয়ে একমাত্র মহান রবের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ইবাদতে মনোনিবেশ করতে হবে, তবেই ইবাদতের স্বাদ গ্রহণ সম্ভব এবং কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জন করাও সম্ভব হবে। ইবাদতের সঠিক পদ্ধতি না মেনে এবং যথাযথ হক আদায় না করে সারা জীবন ইবাদত করে গেলেও তা সফলতা বয়ে আনবে না। সঠিক পন্থা অবলম্বন করে সালাত আদায়ের মাধ্যমে বান্দা নিজেকে অন্যায়, অশালীন ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। কাজেই আমাদেরকে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ মেনে ইবাদত পালন করতে হবে।

লেখক : এমফিল গবেষক, প্রাবন্ধিক

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com